গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে জার্মানিতে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম-১ ও নর্ড স্ট্রিম-২ গ্যাস পাইপ লাইনে নাশকতার ঘটনা ঘটে। শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেদিন গ্যাস সরবরাহকারী ওই দু’টি পাইপ লাইন অকেজো করে দেওয়া হয়।

জার্মান সংবাদমাধ্যম দের স্পেগেল শনিবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওই পাইপ লাইনটি উড়িয়ে দিয়েছিল ডুবুরিদের একটি দল। তারা এ কাজে আন্দ্রোমেদা নামের ১৫ মিটার লম্বার একটি চার্টাড ইয়ট (প্রমোদতরী) ব্যবহার করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

দের স্পেগেল জানিয়েছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দ্রেমেদা প্রমোদতরীটির রুট রোসটোক থেকে জার্মান দ্বীপ রুগেন এবং সর্বশেষ ডেনমার্কের দ্বীপ ক্রিস্টিয়ানিসো পর্যন্ত যাওয়ার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে তারা। ওই দ্বীপটির কাছেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই নাশকতায় যে পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো একটি মাত্র নৌযানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে তাদের ধারণা, এ নাশকতায় ডাইভিংয়ের যন্ত্রপাতি বহনে আরেকটি নৌযান ব্যবহার করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ওই প্রমোদতরীর ছয়জন ক্রুয়ের কাছে বুলগেরিয়ার জাল পাসপোর্ট ছিল। তবে জার্মান তদন্তকারীরা এখনো নাশকতাকারীদের জাতীয়তার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে বের করতে পারেননি।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এ  ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গ্যাস পাইপ লাইন উড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে একটি ইউক্রেনপন্থি গ্রুপ।

এদিকে জার্মান সংবাদমাধ্যম দের স্পেগেল একটি বন্দরের প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা আন্দ্রেমেদা প্রমোদতরীটি ভাড়া করেছিল তাদের বেশভূষা সাধারণ নাবিকদের মতোই ছিল এবং তিনি তাদের কাছে রসদের ব্যাগ দেখেছিলেন। ওই ব্যক্তিদের কথাবার্তা তার কাছে পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকের মানুষের মতো মনে হয়েছে। ওই দলে কয়েকজন পুরুষ এবং নারী ছিলেন।

আন্দ্রেমেদা প্রমোদতরীটি তৈরি করেছে জার্মান কোম্পানি ব্রাভিয়া ইয়ট। এরমধ্যে পাঁচটি কেবিন রয়েছে। যেখানে ১১ জনেরও বেশি মানুষ থাকতে পারেন। প্রমোদতরীটির পেছন দিকে ডাইভ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে সেই স্থানটির গভীরতা প্রায় ৮০ মিটার। ফলে এত গভীরে যেতে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ডুবুরিদের প্রয়োজন। এছাড়া দরকার বিশেষ এয়ার ট্যাংক। যার মধ্যে একটিতে থাকতে হবে হিলিয়াম-অক্সিজেন এবং অপরটিতে খাঁটি অক্সিজেন।

এছাড়া নৌকা থেকে পাইপের কাছে যেতে-আসতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। আবার নর্ডস্ট্রিম-১ থেকে নর্ডস্ট্রিম-২ পাইপের মধ্যে ৪ কিলোমিটারের দূরত্ব রয়েছে। ফলে সেখানে বিস্ফোরক স্থাপন করতে চারজন ডুবুরির কয়েকদিন সময় লাগবে।

এছাড়া এত গভীরে যেতে সেখানে ডিকম্প্রেশন চেম্বারেরও প্রয়োজন হবে। আর এমন ডিকম্প্রেশন চেম্বার ওই প্রমোদতরীটিতে জায়গা হবে না।

ডেনমার্ক এবং সুইডেনের সরকার জানিয়েছে, ওই বিস্ফোরণের যে মাত্রা ছিল, সেটি ঘটাতে প্রায় ২ টন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। আর এত পরিমাণ বিস্ফোরকও ওই প্রমোদতরী বহন করতে পারবে কিনা তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এমটিআই