প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস তথা কোভিড ভ্যারিয়েন্ট বহন করতে পারে ইঁদুর, এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ইঁদুর এমন ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে যা কোভিড-১৯ সৃষ্টি করে।

গবেষকরা বলেছেন, নিউইয়র্ক শহরে প্রায় ৮০ লাখ ইঁদুর রয়েছে এবং তাদের মানুষের সংস্পর্শে আসার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি’র ওপেন-অ্যাক্সেস জার্নাল এমবায়োও-তে গত ৯ মার্চ নতুন ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের ইঁদুর তিনটি কোভিড ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারে। গবেষণার কাজে সংগৃহীত ইঁদুরগুলো সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের আলফা, ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছিল।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, গবেষণার জন্য গবেষকদের ওই দলটি নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বর্জ্য-পানি ব্যবস্থানার আশপাশে বেশিরভাগ ইঁদুরকে আটকেছিল। জীববিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গবেষণার অংশ হিসেবে থাকা ৭৯টি ইঁদুরের মধ্যে ১৩টি বা ১৬.৫ শতাংশ ইঁদুর সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া ওই দলটির প্রধান ড. হেনরি ওয়ান বলেছেন, ‘আমাদের সর্বোত্তম জ্ঞান অনুসারে, এটিই প্রথম কোনো গবেষণা যেখানে দেখা যাচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান শহুরে অঞ্চলে বন্য ইঁদুরের মধ্যে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলো সংক্রমণ ঘটাতে পারে।’

তবে, ইঁদুরগুলো ঠিক কীভাবে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল বা তারা মানব স্বাস্থ্যের জন্য কোনও বিশেষ বিপদ সৃষ্টি করেছে কিনা তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।

ড. হেনরি ওয়ান বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে ইঁদুরের মধ্যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে সংক্রমণের বিষয়ে আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে এই ভাইরাসটি ইঁদুর থেকে প্রাণীদের মধ্যে সঞ্চালিত হচ্ছে কিনা এবং মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এমন নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি করছে কিনা সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘সামগ্রিকভাবে, আমাদের গবেষণায় এটাই দেখা গেছে যে- প্রাণীরা মহামারিতে এমন ভূমিকা পালন করতে পারে যার প্রভাব মানুষের ওপরও পড়তে পারে। আর তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড যেন আরও বৃদ্ধি করা অব্যাহত রাখতে পারি।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, পশু থেকে মানুষে কোভিড সংক্রমণ খুবই বিরল।

সংস্থাটি তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, ‘কোভিড-১৯ জনিত ভাইরাস সার্স-কোভ-২ ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাণীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এমন কোনও প্রমাণ নেই। সংক্রমিত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসলে মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, তবে এটি বেশ বিরল।’

এর আগে হংকং ও বেলজিয়ামে হওয়া ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রাণী ভাইরাসের জেরে কোভিডের সংস্পর্শে এসেছিল। তবে ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলোর ক্ষেত্রে ওই গবেষণাগুলো ছিল অমীমাংসিত।

এছাড়াও এখন পর্যন্ত বিড়াল, কুকুর, প্রাইমেট, জলহস্তী, হরিণ এবং অ্যান্টিয়েটারের মতো প্রাণীগুলোর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।

টিএম