শারমিনা বেগম, ছবি : বিবিসি

‘আইএস বধু’ নামে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাবেক ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগমকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে মূলত যিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই শারমিনা বেগমের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি।

সাক্ষাৎকারে অবশ্য শারমিনা বলেছেন— শামীমা বেগমের সঙ্গে এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই তার। সেই সঙ্গে শামীমাকে ‘অবিশ্বাসী’ ও ‘স্বার্থপর’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, শামীমা যে যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন— তা তিনি জানেন।

২০১৪ সালে পূর্ব লন্ডনের বেনথাল গ্রিন এলাকার তিন স্কুলছাত্রী— শামীমা বেগম, খাদিজা সুলতানা এবং আমিরা আব্বাসি যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে সিরিয়া গিয়েছিলেন আইএসে যোগ দিতে। ওই সময় শামীমার বয়স ছিল ১৫ বছর এবং বাকি দু’জনের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ বছর।

২০১৯ সালে সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে তাকে আবিষ্কার করেন বিবিসির এক সাংবাদিক। বিবিসিকে শামীমা বলেন, সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধা ও নেদার‌ল্যান্ডসের নাগরিক ইয়াগো রেইদিজগের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল এবং তাদের তিনটি সন্তানও জন্মেছিল, কিন্তু সন্তানদের কেউ বেঁচে নেই।

শামীমার সঙ্গে  দেশ ছেড়েছিলেন,তারা এখন কোথায় আছে কিংবা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা— তা এখনও অজানা। বিবিসিকে শামীমা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাজ্যে তিনি যে স্কুলে পড়তেন— সেখানে শারমিনা বেগম নামে তার এক সহপাঠি তাদের তিনজনকে আইএসে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মূলত শারমিনা বেগমের হাতে ‘মগজ ধোলাই’য়ের শিকার হয়ে তারা লন্ডন ছেড়েছিলেন।

বিবিসিকে শামীমা বলেন, ‘শারমিনা প্রথম আমাকে আইএসে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছিল। আমি তার দ্বারা এই পরিমাণ মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছিলাম যে ওই সময় আমার মনে হয়েছিল— আইএসে যোগ দেওয়া আমার জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ।’

শামীমা বেগম

শারমিনা বেগম এখনও সিরিয়াতে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ধারণা, শারমিনা এখনও এই সিরিয়াতেই আছে এবং আইএসের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’

তারপর থেকেই শারমিনার সন্ধান করছিল বিবিসি। দীর্ঘ তিন বছর খোঁজ করার পর একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাইটে তার সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সাইটে ছদ্মনামে একটি অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছেন শারমিনা এখনও সিরিয়াতেই অবস্থান করছেন তিনি। পাশপাশি এই অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে আইএসের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করছেন তিনি।

বিবিসির সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের আলাপচারিতা হয় অনলাইনেই। সাক্ষাৎকারে শামীমা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সে ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিরিয়ায় আসেনি; অন্যান্যদের দেখাদেখি এসেছিল এবং এ কারণেই সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে।’

তিনি আরও জানান, লন্ডনে শামীমার বিয়ে হয়েছিল এবং তার স্বামী শামীমার পড়াশোনা ও বাড়ির বাইরে বেরোনো পছন্দ করতেন না। এ কারণেই আইএসে যোগ দেওয়ার নামে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন শামীমা।

‘সে একজন অবিশ্বাসী, স্বার্থপর এবং আইএসে যেসব নারীযোদ্ধা যোগ দিয়েছেন— তাদের জন্য একটি কলঙ্ক,’ বিবিসিকে বলেন শারমিনা। আইএস সম্পর্কে মিডিয়ায় কথা বলার সময় শামীমা অনেক মিথ্যাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

তবে শারমিনাকে চেনেন— এমন একজন সাবেক আইএস যোদ্ধা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শারমিনা অত্যন্ত উগ্রপন্থী। এমনকি আইএসের মানদন্ডের বিচারেও অনেক যোদ্ধার চেয়ে বেশি গোঁড়া শারমিনা।

আইএসের জন্য অর্থ সংগ্রহ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিরিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরের ছবি ও আইএসের প্রতি সমর্থনজ্ঞাপন করে বিভিন্ন লেখা পোস্ট করে অর্থ সংগ্রহ করছেন শারমিনা। মূলত বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে এই অর্থ।

অর্থসংগ্রহের জন্য কয়েকটি অনলাইন অ্যাকউন্ট খুলেছেন তিনি। তার মধ্যে একটি অ্যাকউন্টে ৩ হাজার ডলার থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

কী কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা হয়— প্রশ্নের উত্তরে শারমিনা বিবিসিকে বলেন, ‘আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নারী ও শিশুদের কাপড় ও খাদ্য ক্রয়ই এই তহবিল সংগ্রহের একমাত্র উদ্দেশ্য।’

তবে সিরিয়ার গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর একজন কমান্ডার জানিয়েছেন, অস্ত্র ক্রয়, হামলার পরিকল্পনার জন্য প্রধানত ব্যয় করা হয় তহবিলের অর্থ।

এসএমডব্লিউ