অন্যান্য মুদ্রার পাশাপাশি ভারত এবং মালয়েশিয়া এখন থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারতীয় রুপির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারবে। গত জুলাই মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতীয় রুপিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারত-মালয়েশিয়া এখন থেকে রুপিতে লেনদেন করতে পারবে বলে শনিবার আরবিআই জানিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে রুপি ব্যবহারের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি সহজতর ও ভারতীয় রুপিতে বিশ্ব বাণিজ্যে দেশগুলোর আগ্রহের প্রতি সমর্থন করা।

কুয়ালালামপুর-ভিত্তিক ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অব মালয়েশিয়া (আইআইবিএম) ভারতের ইউনিয়ন ব্যাংকে রুপি লেনদেনের বিশেষ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুপির লেনদেনের কার্যক্রম সচল করেছে।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের মূল ভিত্তি। দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করছে ভারত-মালয়েশিয়া। ভারতের ১৩তম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মালয়েশিয়া। আর মালয়েশিয়ার শীর্ষ ১০ বাণিজ্যিক অংশীদারের তালিকায় আছে ভারত। আসিয়ানের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারও ভারত।

ভারত এবং মালয়েশিয়ার মাঝে ২০১১ সালের ১ জুলাই একটি দ্বিপাক্ষিক ব্যাপক অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (সিইসিএ) কার্যকর হয়। উভয় দেশের পণ্য, পরিষেবা এবং বিনিয়োগ সহজ ও বৃদ্ধির বিষয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

মালয়েশিয়ায় ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে খনিজ জ্বালানি, তেল; অ্যালুমিনিয়াম এবং এর সামগ্রী, মাংস, লোহা, ইস্পাত, তামা এবং এসব থেকে তৈরি সামগ্রী, জৈব রাসায়নিক, পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর, বয়লার, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামসহ আরও অসংখ্য পণ্যসামগ্রী।

এছাড়া মালয়েশিয়া থেকে ভারত পাম তেল, খনিজ জ্বালানি, খনিজ তেল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, প্রাণী বা উদ্ভিজ্জ চর্বি এবং তেল ও তাদের ক্লিভেজ পণ্য আমদানি করে। এছাড়াও পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর, বয়লার, যন্ত্রপাতি এবং যান্ত্রিক সরঞ্জাম; তামা ও তা থেকে তৈরি জিনিসপত্র, কাঠ, কাঠের কয়লা, অ্যালুমিনিয়াম, জৈব রাসায়নিক, লোহা, ইস্পাত ও অন্যান্য মালয়েশীয় রাসায়নিক পণ্যও আমদানি করে দেশটি।

যৌথ উদ্যোগে প্রথম ভারতীয় কোম্পানি হিসেবে গোদরেজ ১৯৬৮ সালে মালয়েশিয়ায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। সত্তর এবং আশির দশকের শুরুতে মালয়েশিয়ায় যেকোনও দেশের তুলনায় ভারতীয় যৌথ উদ্যোগের সংখ্যা বেশি ছিল। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানি তেল পরিশোধন, বিদ্যুৎ, রেলওয়ে, তথ্য প্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি, শিল্প পণ্য উৎপাদন, উচ্চ শিক্ষা, বেসামরিক নির্মাণ খাতে কাজ করছে।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে ভারতের ২৬তম বৃহৎ বিনিয়োগকারী হিসাবে স্থান পেয়েছে মালয়েশিয়া। এই সময়ে দেশটিতে মালয়েশিয়ার এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এসএস