হিজাব আইনগতভাবে বৈধ ও এটি মেনে চলা বাধ্যতামূলক বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে হিজাব না পরায় দুই নারীর মাথায় দল ঢেলে দেওয়া এবং সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ভাইরালের পর শনিবার (১ এপ্রিল) তিনি এই মন্তব্য করেন।

পরে অবশ্য দই হামলার শিকার ভুক্তভোগী ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিয়া মুসলিমদের পবিত্র শহরের কাছে একটি দোকান চুল খোলা রাখা দুই নারীর ওপর দই হামলার এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই দুই নারী সম্পর্কে মা-মেয়ে।

রয়টার্স বলছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদের কাছে অবস্থিত ওই শহরের একটি দোকানে মা এবং তার মেয়ের মাথায় দই ঢেলে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত লোকটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ইরানের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।

পরে ইরানের নারী পোশাকের নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য মা-মেয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং তাদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে ওই দুই ইরানি নারীর মাথায় দই ঢেলে দেওয়ার ঘটনার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে এবং পরে সেটি ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দোকানে দুই নারী দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাদের কাছে একজন লোক এগিয়ে আসেন। পরে ওই দুই নারীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে তিনি।

এরপর তিনি দোকানের একটি শেলফ থেকে দইয়ের পাত্র নেন এবং একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ অবস্থায় সেটি তিনি তাদের মাথায় ছুঁড়ে মারেন।

ইরানের বিচার বিভাগ বলেছে, দুই নারীকে তাদের চুল দেখানোর জন্য আটক করা হয়েছে। এছাড়া জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য ওই ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিচার বিভাগ জানিয়েছে। মূলত ইরানে জনসমক্ষে চুল উন্মুক্ত রাখা অবৈধ।

পরে এই বিষয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরসারি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে তিনি বলেন: ‘কিছু লোক যদি বলে যে তারা (হিজাবে) বিশ্বাস করে না... এটা প্ররোচনা সৃষ্টিতে ব্যবহার করা ভালো ... কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- হিজাব পরার আইনি প্রয়োজনীয়তা আছে ... এবং হিজাব পরা আজ একটি আইনি বিষয়।’

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার’ কারণে ইরানি নারীদের হিজাব পরা উচিত বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

এছাড়া বার্তাসংস্থা এএফপি তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘হিজাব আইনগতভাবে বৈধ এবং এটি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।’

রয়টার্স বলছে, হামলাকারীকে দোকান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া দোকানদারকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার দোকানটি বন্ধ হয়ে গেছে বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে।

যদিও ওই দোকানির উদ্ধৃতি দিয়ে একটি স্থানীয় সংবাদ সংস্থায় বলা হয়েছে, আদালতে ‘ব্যাখ্যা দেওয়ার’ কারণে তাকে আবার দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দোকানে ওই নারীরা পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন। একপর্যায়ে একজন লোককে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মুখোমুখি হতে দেখা যায়। পরে তিনি কথা বলার জন্য এগিয়ে আসেন এবং দই দিয়ে আক্রমণ করে। এরপর হামলাকারীকে দোকান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় দোকানদার।

টিএম