লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের জন্য নতুন ন্যূনতম মজুরি আইন কার্যকর করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এই অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে বহুল আলোচিত বৈষম্যহীন নতুন এই আইন শনিবার থেকে কার্যকর করেছে কাতার।

নতুন এই আইনে দেশটিতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকরা সর্বনিম্ন মাসিক মজুরি হিসেবে এক হাজার কাতারি রিয়াল পাবেন। এর পাশাপাশি খাবারের জন্য ন্যূনতম ৩৩০ এবং আবাসনের জন্য ৫০০ রিয়াল পাবেন তারা।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে, কাতারের নতুন এই আইনের ফলে দেশটিতে কর্মরত ৪ লাখের বেশি অভিবাসী শ্রমিক অথবা বেসরকারি খাতের প্রায় ২০ শতাংশ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন।

দেশটির সরকারি যোগাযোগ কার্যালয়ের তথ্য বলছে, নতুন আইনটি মেনে চলতে ইতোমধ্যে কাতারের ৫ হাজারের বেশি কোম্পানি তাদের বেতন ব্যবস্থা হালনাগাদ করেছে।

কাতারের মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ; যার মধ্যে মাত্র ৩ লাখ মানুষ দেশটির নাগরিক।

শোষণ এবং নিপীড়ন

গত কয়েক বছরে কাতারের প্রশাসনিক, শ্রম ও সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশটিতে বেশ কিছু সংস্কারকৃত শ্রম আইন বাস্তবায়ন করেছে। চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার অনুমতির বিতর্কিত একটি আইন গত বছরের আগস্টে বাতিল করে এই মন্ত্রণালয়।

অতীতে কাফালা ব্যবস্থার কারণে চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অভিবাসীদের শ্রমিকদের ব্যাপক ঝামেলার মধ্যে পড়তে হতো। নিয়োগকর্তার অনুমতি ব্যতীত শ্রমিকরা চাকরি পরিবর্তন করতে পারতেন না। এই আইনের ফলে দেশটিতে শ্রমিকরা শোষণ এবং নিপীড়নের শিকার হতেন বলে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা কাতার সরকারের সমালোচনা করে এবং আইনটি বাতিলের আহ্বান জানায়।

পরবর্তীতে এই আইনে সংশোধনী আনায় শ্রমিকদের শোষণ এবং নিপীড়ন কমছে বলে জানায় কাতার সরকার। দেশটির সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, গত বছরের শেষের দিকে (যখন আইনটি সংশোধন করা হয়) নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭৮ হাজারের বেশি শ্রমিক সফলভাবে চাকরি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন।

২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসেবে ২০১০ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কাতারে শ্রমিকদের মানবাধিকার ও লাঞ্ছনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। গত ১০ বছরে নজিরবিহীন নির্মাণযজ্ঞ পরিচালনা করেছে কাতার; যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনের প্রস্তুতি।

ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কাতারে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে।

সাতটি নতুন স্টেডিয়ামের পাশাপাশি বিশাল বিশাল কয়েক ডজন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অথবা নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে একটি নতুন বিমানবন্দর, সড়ক-মহাসড়ক, গণ-পরিবহন ব্যবস্থা, হোটেল এবং একটি নতুন শহর নির্মাণকাজও রয়েছে; যে শহরে আগামী ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে।

দশ বছর আগে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কাতারে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার এই নাগরিকরা দেশটিতে বিশ্বকাপ ঘিরে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকে কাতারে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ হাজার ১৮, ভারতের ২ হাজার ৭১১, নেপালের ১ হাজার ৬৪১, পাকিস্তানের ৮২৪ এবং শ্রীলঙ্কার ৫৫৭ অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন বলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধানি এক প্রতিবেদনে জানায় ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান।

তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটি বলছে, শ্রম আইনে সংস্কার আনতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য সময়ের দরকার।

এসএস