ভারতের দ্বাদশ ক্লাসের ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্বলিত অধ্যায়টি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি বদল ঘটানো হয়েছে পাঠ্যবইতে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিল (এনসিইআরটি) দেশটির স্কুলগুলোর জন্য পাঠ্যবই প্রকাশ করে। এ বছরের জন্য তারা দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য যে বইটি প্রকাশ করেছে, সেই ‘থিমস অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’ তিনটি ভাগে ছাপা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগের নবম অধ্যায়তেই ছিল রাজা এবং ইতিহাস, মুঘল দরবার অংশটি।

এনসিইআরটির ওয়েবসাইটে নতুন ইতিহাস বইটি ডাউনলোড করার জন্য যে লিংক আছে, সেখানে মুঘল শাসকদের নিয়ে ২৮ পাতার যে অধ্যায়টি ছিল, তা এখন আর নেই। মুসলমান শাসকদের ইতিহাস পাঠ্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টাকে ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘলদের মুছে ফেলার চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে এনসিইআরটি যুক্তি দিয়েছে যে ছাত্রছাত্রীদের ওপর থেকে ‘পাঠ্যক্রমের বোঝা কম’ করতেই এই অধ্যায়টি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বইটিতে এখনো কিছু অধ্যায়ের মধ্যে মুঘলদের উল্লেখ রয়েছে।

পঞ্চম অধ্যায়তে যেমন দশম থেকে সপ্তদশ শতকের ভারতের কথা বলা হয়েছে, আর ষষ্ঠ অধ্যায়তে ভক্তি ও সুফি পরম্পরা আলোচনা করার সময়েও মুঘল আমলের প্রসঙ্গ আছে। অষ্টম অধ্যায়তে কৃষক, জমিদার ও মুঘল সাম্রাজ্য নিয়ে লেখা হয়েছে।

পাঠ্যবই বদল হলো কেন ?

পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের পক্ষে বলতে গিয়ে এনসিইআরটির প্রধান দিনেশ সাকলানী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মুঘলদের ইতিহাস বাদ দিয়ে দেওয়া হয়নি, ছাত্রছাত্রীদের ওপর থেকে পাঠ্যক্রমের বোঝা কিছুটা কমানো হয়েছে। আমরা গতবছরই বলেছিলাম যে করোনা মহামারির কারণে ছাত্রছাত্রীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, তাদের ওপরে চাপ বেড়েছে। পাঠ্যক্রমের বোঝা তাই কিছুটা কম করা হলো। আর এটা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী করা হয়েছে।

পাঠ্যবইতে পরিবর্তন শুধু যে ইতিহাসের বইতেই করা হয়েছে, তা নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই থেকেও বেশ কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে, যেখানে হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতিবাচক মনোভাব প্রসঙ্গে লেখা ছিল। গান্ধীকে হত্যার পরে যে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল, সেই অংশটাও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতির অঙ্গনে বিজেপি এবং আরএসএস জওহরলাল নেহরু-ইন্দিরা গান্ধী পরিবারের বিপরীতে বল্লভভাই প্যাটেলকে তুলে ধরতে চায়। গুজরাটে বিশ্বের সবথেকে উঁচু যে মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটাও বল্লভভাই প্যাটেলের। আবার একাদশ শ্রেণীর সমাজবিজ্ঞানের বই থেকে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গে দুটি অধ্যায়ও বাদ দেয়া হয়েছে।

পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক

বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলো এনসিইআরটির পাঠ্য বইতে এসব পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে, আবার উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো বলছে তারা নতুন বই পড়াবে। এনসিইআরটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান জেএস রাজপুত বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

তিনি বলছিলেন, এনসিইআরটি একটা বড় প্রতিষ্ঠান। সেখানে বিশেষজ্ঞরা আছেন। তারা যখন কোনো পরিবর্তন করেন, সেগুলো অ্যাকাডেমিকই হয়। ইতিহাসের বইতে যদি কোথাও কেউ নিজস্ব ভাবনা আর তত্ত্ব যোগ করে থাকেন, সেগুলো সরিয়ে দেওয়াই উচিত। কিন্তু মুঘল আমলের ইতিহাস পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, কিন্তু আমারও এটা মনে হতো যে মুঘল আমলের ইতিহাস খুব বেশি করে পড়ানো হচ্ছে। যেন শুধু মুঘল আমলেই ভারতবর্ষের অস্তিত্ব ছিল! আবার ইতিহাসের কোনো একটা সময়ের কিছু অংশ বাদ দিয়ে পড়ানোটাও অনুচিত।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

ওএফ