ভারতে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা, খুশি মোদি
ভারতে বন্য বাঘের সংখ্যা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বন্য বাঘ রয়েছে ভারতে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার বাঘশুমারি প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ভারতে মোট বন্য বাঘের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৭টি। চার বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে তা বেড়ে ৩ হাজার ১৬৭টি হয়েছে।
এক সময় মধ্য, পূর্ব, দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বিচরণ করত অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতির জন্য পরিচিত বাঘ। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী, গত ১০০ বছরে ঐতিহাসিক পরিসীমার তুলনায় ৯৩ শতাংশেরও বেশি হারিয়ে গেছে বাঘ। বর্তমানে কেবল বিশ্বের ১৩টি দেশে বিক্ষিপ্তভাবে কিছুসংখ্যক বাঘ টিকে আছে।
বিজ্ঞাপন
ভারতে প্রত্যেক চার বছর অন্তর বাঘশুমারি পরিচালনা করা হয়। ক্যামেরার ফাঁদ আর কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে বনাঞ্চলে বসবাসরত বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
ভারতের বাঘশুমারির তথ্য বলছে, ২০০৬ সালে ভারতে বাঘের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১১টি। ২০১০ সালে তা বেড়ে এক হাজার ৭০৬টি হয়। পরে তা বেড়ে ২০১৪ সালে ২ হাজার ২২৬টি, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৬৭টিতে দাঁড়ায়। আর গত বছর দেশটিতে বন্য বাঘের এই সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ১৬৭টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দেশটিতে বাঘ রক্ষায় নেওয়া সরকারি উদ্যোগ ‘প্রোজেক্ট টাইগারের’ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্সের’ ঘোষণা দিয়েছেন। এই জোট বিশ্বে বাঘ, সিংহসহ অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের বিষয়ে কাজ করবে।
তবে দেশটিতে বাঘের বংশ বৃদ্ধির হার আগের চার বছরের ৩০ শতাংশের চেয়ে ২০২২ সালের বাঘশুমারিতে সাত শতাংশ কম হয়েছে। তারপরও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন বাঘশুমারিকে তার জন্য এক গর্বের মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন।
দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের মাইসুরুতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পরিবারেনর সম্প্রসারণ ঘটছে। এা কেবল ভারতের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের এক সাফল্য।
বন উজাড়, চোরাকারবারিদের শিকার আর আবাসস্থলের ওপর মানুষের আগ্রাসন এশিয়াজুড়ে বাঘের জনসংখ্যাকে ধ্বংস করেছে। মোদি বলেছেন, দেশের ‘জনগণের অংশগ্রহণ’ এবং ‘সংরক্ষণের সংস্কৃতি’র জন্য ভারত বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের মোট বাঘের ৭৫ শতাংশের আবাসস্থল এখন ভারতে।
১৯০০ সালে এক লাখেরও বেশি বাঘ এই বিশ্বে বিচরণ করত বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে তা রেকর্ড সর্বনিম্ন ৩ হাজার ২০০-তে নেমে আসে। সেই বছর ভারত এবং বিশ্বের অন্য ১২টি দেশ ২০২২ সালের মধ্যে নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছিল বলে মনে করা হয়। পরবর্তী কয়েক দশকে দেশটিতে বাঘের সংখ্যা ভয়াবহ পরিমাণে কমে যায়। ২০০২ সালে তা ৩ হাজার ৭০০টিতে নেমে যায়। এর চার বছর পর ২০০৬ সালে তা স্মরণকালের সর্বনিম্নে পৌঁছায়। কিন্তু পরের বছরগুলোতে দেশটিতে বাঘের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস