মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা পৃথিবীর বিস্ময়কর আকাশচুম্বী এক বহুতল ভবন। যার উচ্চতা ৮২৮ মিটার। দেশটির অন্যতম আকর্ষণ এ গগনচুম্বী বহুতলকে নিয়ে পর্যটকদের উৎসাহের কোনও শেষ নেই। দৃষ্টিনন্দন এই ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট এবং স্টুডিও মিলিয়ে মোট বাসস্থানের সংখ্যা ৯০০। যেখানে থাকেন ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।

আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের নামে এ আকাশচুম্বী ভবনের নামকরণ করা হয়েছে। প্রথমে যার নাম ছিল বুর্জ দুবাই। পরে প্রেসিডেন্টের সম্মানে এর নাম পরিবর্তন করা হয়।

বুর্জ খলিফা তৈরির কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালের ৬ জানুয়ারি। নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ৫ বছর এবং এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বহুতল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ১৬৩ তলার বুর্জ খলিফা অনেক রেকর্ডের অধিকারী। পৃথিবীর আরও কোনও বহুতলে এতগুলো তলা নেই বললেই চলে।

বুর্জ খলিফার মধ্যে রয়েছে মোট ৪টি সুইমিং পুল। একটি বহুতলের ৪৩ তলায় আর একটি ৭৬ তলায়। বাকি দুইটি সুইমিং পুল রয়েছে ‘দ্য ক্লাব’-এর ছাদ এবং এক পাশে। ‘দ্য ক্লাব’ হলো বুর্জ খলিফার একটি স্বাস্থ্যচর্চা কেন্দ্র। এছাড়া এর ১২৩ তলায় রয়েছে একটি লাইব্রেরি। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন, এখানে বসেই তাদের সময় কেটে যাবে।

বহুতলের ৪৩, ৭৬ এবং ১২৩ তলায় রয়েছে কাচ দিয়ে মোড়া হল ঘর (স্কাই লবি)। যা বড়সড় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। এর অভ্যন্তরীণ ‘অ্যাটমোসফিয়ার’ পৃথিবীর উচ্চতম রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০২১ সাল পর্যন্ত উচ্চতম রেস্তোরাঁর শিরোপা ছিল এর নামেই। পরে চীনের একটি বহুতলে তৈরি রেস্তোরাঁ এর মুকুটটি ছিনিয়ে নেয়।

এছাড়া পৃথিবীর উচ্চতম আউটডোর অবজারভেশন ডেক রয়েছে এর ১৪৮ তলায়। ৫৫৫ মিটার উঁচু এ জায়গাটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। যার কারণে ছবির মতো দেখায় এখান থেকে দুবাই শহরটিকে। বুর্জ খলিফা থেকে ১৫৩ কিলোমিটার দূরে ইরানের সমুদ্র উপকূলও এখান থেকে দেখতে পান পর্যটকরা।

বুর্জ খলিফার ১ থেকে ৮ তলা জুড়ে রয়েছে আরমানি হোটেল। যার মধ্যে রয়েছে ১৬০টি ঘর। এর বাসিন্দা ছাড়াও বাহির থেকে মানুষ এসে এ হোটেলে থাকতে পারেন। হোটেলের নিজস্ব স্পা, সুইমিং পুল, লাইব্রেরি এবং জিম রয়েছে।

এ ভবনটিতে রয়েছে নিজস্ব দোকান, বাজার ও শপিং মল। যার ফলে এখানকার বাসিন্দাদের কিছু কেনার জন্য অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

পৃথিবীর উচ্চতম এ বহুতলে থাকার খরচও কম নয়। এখানে ৪ ‌থেকে ৫ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ২ কোটি ৭ লাখ ডলার। এর স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টগুলোর দাম ২০ লাখ আরবিয় মুদ্রা।

বুর্জ খলিফার বহুতলের বাসিন্দাদের সার্ভিস চার্জ বাবদ বাড়তি টাকাও গুনতে হয়। অ্যাপার্টমেন্টের আকারের ওপর নির্ভর করে সেই খরচ। কখনো কখনো তা হতে পারে বছরে ৫ লাখ আরবিয় মুদ্রা। এছাড়াও এ ভবনটিতে রয়েছে ঘূর্ণায়মান ব্যালকনি ও ঝুলন্ত বাগান।

এফকে