উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে ‘শান্তি প্রাচীরের’ পাশ দিয়ে হাঁটছেন এক দম্পতি

উত্তর আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় তিন দশকের উত্তেজনা ও সহিংসতা  বন্ধ করতে ২৫ বছর আগে ‘গুড ফ্রাইডে’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ সেই সংঘাতের বলি হয়েছিলেন।

১৯৯৮ সালের ১০ এপ্রিল থেকে আয়ারল্যান্ডের দ্বীপে যুক্তরাজ্যের এই প্রদেশে তখন থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার কাঠামো চালু আছে। কিন্তু ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার ফলে সেই শান্তির অন্যতম ভিত্তি নড়ে গেছে।

আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্থলসীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আগের মতোই প্রায় অদৃশ্য রাখার উদ্যোগের ফলে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটিশ ভূখণ্ডের মাঝে সমুদ্রে নতুন এক সীমা গজিয়ে উঠেছে। ফলে প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

প্রোটেস্টান্ট ডিইউপি দল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাদেশিক সরকারে অংশ নিতে অস্বীকার করে আসছে। সেই জটিলতা কিছুটা কমাতে সম্প্রতি ব্রিটেন ও ইইউ এক সমঝোতায় এলেও নতুন করে অশান্তির আশঙ্কা দূর হচ্ছে না।

এমনই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার উত্তর আয়ারল্যান্ড সফরে আসছেন আইরিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার সফরে আড়ম্বর ছাড়াই এক সপ্তাহ ধরে ‘গুড ফ্রাইডে’ চুক্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন করা হবে।

মূলত ২৫ বছর আগে মার্কিন প্রশাসন সেই প্রদেশে শান্তি ফেরাতে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছিল। বর্তমানে সেই শান্তি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। গত মাসে ব্রিটেনের এমআই ফাইভ গোয়েন্দা সংস্থার এক রিপোর্ট অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতেই সহিংসতা শুরু হতে পারে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা করছে।

এমনকি বাইডেনের সফরের সময়েও হামলার আশঙ্কা দূর করা যাচ্ছে না।

ব্রিটেন ও আইরিশ প্রজাতন্ত্রের ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই প্রধানমন্ত্রী নতুন করে উত্তেজনা এড়াতে জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দুই দেশের সরকারের মধ্যে সেই সহযোগিতার প্রতি বিশাল আন্তর্জাতিক সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন।

তার মতে, ২৫ বছর আগে সব পক্ষ আপোশ মেনে নিয়ে সব কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই মনোভাবের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকর সুনাকের সঙ্গে মিলে উত্তর আয়ারল্যান্ডে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর অঙ্গীকার করেছেন।

গত ২৫ বছরে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাস্তব পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যালেট বক্সে রাজনৈতিক সমীকরণও আগের মতো নেই। গত আঞ্চলিক নির্বাচনে জয়লাভ করে শিন ফেন দল ক্ষমতার নেতৃত্ব দিচ্ছে।

প্রোটেস্টান্ট ডিইউপি দল সরকারে যোগ না দেওয়ায় অবশ্য অচলাবস্থা চলছে। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণের আকাঙ্ক্ষাও বেড়ে চলেছে।

ফলে ‘গুড ফ্রাইডে’ বোঝাপড়া নতুন করে চাঙ্গা করতে না পারলে ভবিষ্যতে উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ ব্রিটেনের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।

এছাড়া স্কটল্যান্ডের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নতুন ‘ফার্স্ট মিনিস্টার’ নতুন করে সেই প্রদেশের স্বাধীনতার প্রয়াস চাঙ্গা করে তোলার অঙ্গীকার করায় ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

টিএম