ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জেরে প্রয়োজনীয় তহবিল না মেলায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নির্ধারিত সময়সূচি দ্বিতীয় দফায় স্থগিত ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। মঙ্গলবার দেশটির নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, দেশজুড়ে আগামী ২৫ মার্চ ৩৪০টি স্থানীয় কাউন্সিলের নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তহবিলের তীব্র ঘাটতির কারণে এই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে ও দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে বৈঠকের একদিন পর নির্বাচন কমিশন এই ঘোষণা দিয়েছে। লঙ্কান নির্বাচন কমিশনের মহাপরিচালক সামান শ্রী রত্নায়েকে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তহবিলের জোগান নিশ্চিত করার পরই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হবে।

দেশটির স্থানীয় এই নির্বাচন গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়। গত মাসে তহবিল স্বল্পতার কারণে দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনের পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা বাতিল করে।

পরে দেশটির সরকারের প্রিন্ট বিভাগের কর্মকর্তা গঙ্গানি লিয়ানাগে বলেছিলেন, ২১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পোস্টাল ভোটিং পরিচালনার জন্য ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো অর্থ তাদের কাছে নেই বলে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়। যে কারণে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

নির্বাচন স্থগিতের সময় পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে মাত্র ৪০ মিলিয়ন লঙ্কান রুপি পেয়েছিলেন। যদিও এই নির্বাচন আয়োজনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন রুপির দরকার বলে জানান তিনি।

দেশটির ৩৪০টি স্থানীয় কাউন্সিলের এই নির্বাচন গত বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেবারও একই কারণে অর্থাৎ অর্থনৈতিক সংকটের জেরেই স্থগিত করা হয়েছিল নির্বাচন।

করোনা মহামারি ও বিগত রাজাপাকসে সরকারের আর্থিক অনিয়ম-অপব্যয়, ত্রুটিপূর্ণ করনীতির জেরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের মজুত প্রায় শূন্যে নামে। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র গত বছর থেকে অভূতপূর্ব অর্থ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এত গভীর অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কা।

গত বছরের মে মাসে জনবিক্ষোভ তীব্র পর্যায়ে পৌঁছানোর পর পার্লামেন্ট সদস্য রনিল বিক্রমাসিংহেকে অর্থমন্ত্রী করেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তারপর ওই বছরই জুলাই মাসে দিকে বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পলায়ন করার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন বিক্রমাসিংহে। সেই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ও নিজের দায়িত্বে রাখেন।

গোতাবায়া গোপনে দেশ ছেড়েছিলেন গত বছর ১৩ জুলাই। তার এক সপ্তাহ আগে, ৬ জুলাই অর্থমন্ত্রী রনিল ঘোষণা করেন— দেউলিয়া হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে চীন ও ভারতের কাছ থেকে। দেউলিয়া ঘোষণার পর সেসব বিদেশি ঋণ কীভাবে পরিশোধ করা হবে— সেই প্রশ্ন দেখা দেয়। বকেয়া ঋণের কিস্তি প্রদানে একটি নতুন কর্মসূচিও প্রণয়ন করে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার।

প্রায় এক বছর ধরে দেন দরবার ও আলোচনার পর গত মাসের শেষের দিকে আইএমএফের ঋণ লাভে সফল হয় শ্রীলঙ্কা। যা দেশটির জন্য অতি প্রয়োজনীয় ছিল। ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩৩ মিলিয়ন ডলার দেবে আইএমএফ। বাকিটা ধাপে ধাপে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সূত্র: পিটিআই, রয়টার্স।

এসএস