বাংলায় মশা মারতে কামান দাগার বাগধারাটি খুবই প্রচলিত। তবে এবার এ বাগধারাটি সত্যিকার অর্থেই যথার্থ রূপ পেল। এবার ডেঙ্গু মশার বিরুদ্ধে এক অভিনব উদ্যোগ নিল আর্জেন্টিনা সরকার। মশারা যেন ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করতে না পারে তাই মশার উপদ্রব বেশি এমন স্থানগুলোতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এতে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সহজ হবে বলে মনে করছে আর্জেন্টাইন প্রশাসন।

দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটিতে গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সংক্রমণ দমনে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। তাই মশাকে জীবাণুমুক্ত করতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের পথে হাঁটল তারা।

চলতি বছরে দেশটিতে ৪১ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যা একটি রেকর্ড হিসেবেই ধরা হচ্ছে। ২০১৬ এবং ২০২০ সালেও আর্জেন্টিনায় বহু মানুষ ডেঙ্গুর কবলে পড়েছিল। ফলে মৃত্যু হয় অনেকের।

আর্জেন্টিনার জাতীয় পারমাণবিক শক্তি কমিশনের জীববিজ্ঞানী মারিয়ানেলা গার্সিয়া আলবা জানিয়েছেন, বিশ্বের সর্বত্র তাপমাত্রা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু বাহিত মশার বংশবৃদ্ধি দ্রুত হারে বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি। তাই এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মশার ওপর পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগ করা নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে চিন্তাভাবনা শুরু হয় তার। বর্তমানে পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু বাহিত পুরুষ মশাদের জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে বলে জানান এ জীববিজ্ঞানী। আগামী নভেম্বর মাসে জীবাণুমুক্ত এ পুরুষ মশাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ায় মূলত এডিস ইজিপ্টাই জাতের মশা। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, চোখ, মাথাসহ শরীর ব্যথা। এর সংক্রমণ হলে, দুই হারের জয়েন্টও ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়া রোগীদের বমি বমি ভাব এবং ক্লান্তিবোধও লক্ষ্য করা হয়। তবে যেকোনো অপরিষ্কার জায়গায় জমে থাকা পানিই হলো ডেঙ্গু রোগ বহন করা মশাদের আঁতুড়ঘর। তাই বাড়িঘর থেকে শুরু করে উঠোন বা ছাদসহ যেকোনো জায়গায় পানি জমতে না দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

গত কয়েক দশকে এক্সরে বিকিরণ ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ জীবাণুমুক্ত করার অনুরূপ কৌশলগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। যা চিকুনগুনিয়া এবং জিকার মতো ভয়ঙ্কর রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। তবে মশার ওপর পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের নজির এবারই প্রথম। এ উদ্যোগে আর্জেন্টিনা ডেঙ্গুমুক্ত হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

এফকে