অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’

ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমি ঢুকেছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

অমর্ত্য সেন নিজে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেছেন। তার নানা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য। এমনকি মা অমিতা সেনও বিশ্বভারতীর ছাত্রী ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির দাবি, গত শতকের চল্লিশের দশকে অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। এই জমিতেই গড়ে উঠেছে অমর্ত্য সেনদের পারিবারিক বাড়ি ‘প্রতীচী’। ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে জমির লিজ তার নামে হস্তান্তর করা হয়।

বিশ্বভারতীর দাবি, জমি মেপে দেখা যায়, পাশাপাশি লিজ দেওয়া দুই জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে গেছে ‘প্রতীচী’র সীমানায়।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রজতকান্ত রায় উপাচার্য থাকাকালে অমর্ত্য সেনকে বিষয়টি একাধিক বার মৌখিক ভাবে জানানো হলেও তিনি গাঁ করেননি।  

তবে অমর্ত্য সেনের দাবি, বিশ্বভারতী কোনো দিন জমি নিয়ে অনিয়মের কথা জানায়নি। বিষয়টি তিনি আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন।

অমর্ত্য সেন জানান, বিশ্বভারতীর যে জমিতে তার বাড়ি সেটি দীর্ঘমেয়াদে লিজ নেওয়া। যার মেয়াদ শেষ হতে এখনো অনেক দেরি। তার বাবা নিজে কিছু জমি কিনেছিলেন। সরকারি খতিয়ানে মালিকানার তথ্য নথিভুক্ত আছে।

বিশ্বভারতী সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির ভুল রেকর্ডের ঘটনা প্রায় ৭৮টি। অমর্ত্য সেনের পাশাপাশি বিখ্যাত শিল্পী সুরেন কর, অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধনের মতো বেশ কিছু ব্যক্তির শান্তিনিকেতনের বাসভবনেও বিশ্বভারতীর জমি ঢুকে গেছে।

জমি নিয়ে বিতর্কে অমর্ত্য সেনের পক্ষ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার অভিযোগ, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলেই অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করা হচ্ছে।

শুক্রবার অমর্ত্য সেনকে লেখা এক চিঠিতে মমতা বলেছেন, বিশ্বভারতীতে কিছু নব্য বহিরাগত তার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে আশ্চর্যজনক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। দেশের সংখ্যাগুরুদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেন যে লড়াই শুরু করেছেন তা তাকে এসব অসত্য শক্তির শত্রুতে পরিণত করেছে।

বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেন দীর্ঘদিন ধরেই সরব। তার অভিযোগ, ভারতে বহু শতক ধরে চর্চিত বহুত্ববাদী ভাবধারাকে ধ্বংস করতে চায় কেন্দ্রের শাসক শক্তি। এ জন্য অতীতে বহু বারই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতারা।

‘প্রতীচী’র জমি ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ সেই আক্রমণেরই নতুন দিক বলে বিবেচনা করছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, শান্তিনিকেতনে আমার জন্ম হয়েছে। সেখানেই বড় হয়েছি। তাই সেখানকার নিজস্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশ্বভারতী উপাচার্যের সংস্কৃতির বড় রকমের তফাতের বিষয়ে আমি আলোচনা করতেই পারতাম।

তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বলীয়ান দাবি করে দেশটির আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা  

এসআরএস