সেনাবাহিনীর সাথে আধা-সামরিক বাহিনীর শান্তি চুক্তির পর দুই বাহিনীর মধ্যে পঞ্চম দিনের মতো সংঘর্ষ চলছে উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে। বুধবার দেশটির রাজধানী খার্তুমে দুই বাহিনীর সংঘর্ষের কারণে হাজার হাজার মানুষ শহরটি ছেড়ে পালিয়েছেন। গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়া দেশটির দুই জেনারেলের বাহিনীর মধ্যে শনিবার সহিংসতা শুরু হয়। দেশটির সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ও তার ডেপুটি মোহাম্মদ হামদান ডাগলো নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সদস্যদের মাঝে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

সুদানের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে চূড়ান্ত চুক্তির মূল শর্ত ছিল আরএসএফকে নিয়মিত সেনাবাহিনীর সাথে একীভূতকরণ। কিন্তু আরএসএফের প্রধানের এই বিষয়টি নিয়ে সেনাপ্রধানের তিক্ত বিরোধের জেরে দুই বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, খার্তুমের বিস্ফোরণে ভবনগুলো কেঁপে উঠেছে এবং ভারী গুলির শব্দ শোনা গেছে। মধ্য-খার্তুমের সেনা সদর দপ্তরের চারপাশের ভবনগুলো থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

তারা বলেছেন, সাঁজোয়া যানবাহন ও ভারী অস্ত্র বোঝাই পিক-আপ ট্রাক নিয়ে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে আরএসএফের যোদ্ধারা। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো মাথার ওপরে গর্জন করছে। এ সময় আরএসএফের যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর বিমান লক্ষ্য করে গুলিও চালিয়েছে।

দুই বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষের কারণে খার্তুমে খাদ্য সরবরাহ হ্রাস, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক মরিয়া হয়ে খার্তুমে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন।

মঙ্গলবার প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তা ভেস্তে যায়। ২৪ ঘণ্টার জন্য ওই শান্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা ভেস্তে যাওয়ায় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষ তাদের বাড়িঘরে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হাজার হাজার মানুষ সঙ্গে মালামাল নিয়ে খার্তুমে তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে শুরু করেছে। নারী ও শিশুসহ অনেকে গাড়িতে এবং অন্যরা পায়ে হেঁটে খার্তুম ছাড়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন।

তারা বলছেন, খার্তুমের রাস্তাঘাট মৃতদেহে ছেয়ে গেছে। লাশের দুর্গন্ধে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

জাতিসংঘ বলছে, সুদানের দুই বাহিনীর সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৮০০ জনের বেশি। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে আহত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে পারছেন না বলে দেশটির চিকিৎসকদের সংগঠন জানিয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সুদানে আটকা হাজার হাজার নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে। আটকা পড়াদের মধ্যে জাতিসংঘের অনেক কর্মীও রয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সূত্র: এএফপি।

এসএস