আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত চীনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তেল সরবরাহ করবে সৌদি আরব। দেশটির ‍রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী কোম্পানি আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের রোববার চীন উন্নয়ন ফোরামের সঙ্গে এক বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করা এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনে চীনে যে গবেষণা হচ্ছে, তাতে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই সৌদি সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোববার এক ভিডিওবার্তায় চীন উন্নয়ন ফোরামকে নাসের বলেন, ‘টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জ্বালানি সম্পদের যোগানেও নিশ্চয়তা প্রয়োজন। চীনকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করতে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে সৌদি আরবের সরকারী পর্যায়ে। আমরা নিশ্চিত করছি, আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে আরামকো চীনকে পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করা হবে।’

২০২০ সাল পর্যন্ত রাশিয়া ছিল চীনের সর্ববৃহৎ পেট্রোলিয়াম যোগানদাতা দেশ, কিন্তু চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে এই প্রতিযোগিতায় রাশিয়াকে পেছনে ফেলেছে সৌদি আরব। গত জানুয়ারি থেকে পূর্বেবর্তী বছরগুলোর তুলনায় চীনে ২ দশমিক ১ শতাংশ (১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেল) অধিক পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করছে দেশটি।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, মহামারির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমলেও চীনে প্রতিদিনই বাড়ছে এর চাহিদা। বর্তমানে দেশটির জ্বালানি তেলের চাহিদা পৌঁছেছে প্রায় মহামারি শুরুর আগের পর্যায়ে।

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনের জ্বালানি সম্পদ সম্পর্কিত ১০০ বছরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করবে চীন। এজন্য প্রচুর জ্বালানি সম্পদের প্রয়োজন পড়বে এবং এই সময়কালে, অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বা কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবে দেশটির সরকার।

কিন্তু তারপর থেকে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসবে দেশটি। শি জিনপিং জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের পর থেকে জ্বালানি সম্পদের প্রয়োজনীয় রূপান্তরের দিকে মনযোগ দেবে চীন, যাতে তা পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

ভিডিওবার্তায় আরামকোর প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, চীন সরকারের এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হতে চায় সৌদি সরকারের জ্বালানি সম্পদ বিভাগ। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামকে পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তর বিষয়ক যে গবেষণা চলছে, তাতেও অংশ নিতে চায় সৌদি আরব।

‘প্রকৃতপক্ষে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সম্পদ উৎপদনে চীনের সঙ্গে যুগপৎভাবে গবেষণা করতে চায় সৌদি আরব। এ কারণে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করে তুলতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

চীনের জ্বালানি তেল বিষয়ক গবেষণা সংস্থা চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটির বার্ষিক পেট্রোলিয়াম চাহিদা ৭৩০ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ