ভারতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ভীতিকর পর্যায়ে
ভারতে গত সপ্তাহে আরও দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দেশটিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সর্বাধিক সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে গেল সপ্তাহটি অন্যতম। ভারতে এখন সক্রিয় মোট করোনা রোগীর ৭০ শতাংশই পশ্চিমের ধনী রাজ্য হিসেবে পরিচিতি মহারাষ্ট্রের। বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভীতিকর’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে একদিনে সর্বাধিক সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ভারতে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে যেভাবে আবার ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে তা উদ্বেগজনক। গেল সপ্তাহজুড়ে ভারতে প্রতিদিনই গত চার মাসের মধ্যে করোনার রেকর্ড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর প্রতিদিন ভাঙছে আগের দিনের রেকর্ড।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ ন্যূনতম সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিগুলো না বাড়ায় সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি। তারা মাস্ক পরছেন না, মানছেন সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। এরমধ্যে কুম্ভমেলার মতো জনবহুল ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপিত হচ্ছে। এছাড়া করোনার নতুন ধরনকে সংক্রমণ বৃদ্ধি একটি কারণ বলা হচ্ছে। তবে এটা এখনো প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয় নয়।
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারতে এখন পর্যন্ত এক কোটি দশ লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার মারা গেছেন। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছেছিল। ওই সময় দিনে প্রায় এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হলেও এ বছরের শুরু থেকে তা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে তা ১৬ হাজারেও নেমেছিল।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু গত সপ্তাহে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে খুবই দ্রুতগতিতে। আর সংক্রমণের দিক থেকে বরাবরের মতোই শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে দেশটির আরও সাত রাজ্য। রাজ্যগুলো হলো— কেরালা, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাডু, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশ। সবগুলোতেই এখন করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় শপিং সেন্টার ও ট্রেন স্টেশনের মতো জনবহুল এলাকাগুলোতে তারা র্যাপিড করোনা টেস্ট শুরু করবেন। গত সপ্তাহে— ১৫ থেকে ২১ মার্চ— ভারতে আগের সপ্তাহের তুলনায় এক লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ভাইরাসটির প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ভারতের প্রখ্যাত জরুরি সেবা বিশেষজ্ঞ ডা. এ ফাতাহ উদ্দীন— যিনি হাজার হাজার কোভিড রোগীর চিকিৎসা করেছেন— তিনি বিবিসিকে বলেছেন, করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এটা তো অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল। বছরের শুরুতে যখন সংক্রমণ কমছিল তখন দেশজুড়ে মিথ্যা এক ধরনের আশবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। সতর্কতার বিষয়টি না থাকায় আবার সংক্রমণ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতজুড়ে হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে এক ধরনের মিথ্যা আশাবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এটা আসলে ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া থেকে এখনো অনেক দূরে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে তো করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ভীতিকর পর্যায়ে রয়েছে। এখন আমাদের টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়াতে হবে। দেশজুড়ে জোরদার করতে হবে ‘টেস্ট, ট্রেস ও আইসোলেশন’ সংক্রান্ত পদক্ষেপ।
বিবিসির সোমবারের এক অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে গত ১৬ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত চার কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে; যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র চার শতাংশ। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ২৫ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এএস