দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। বলসোনারোর কোভিড টিকা রেকর্ডের বিষয়ে তদন্তের অংশ হিসাবে বুধবার (৩ মে) রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড টিকা রেকর্ডের তদন্তের অংশ হিসাবে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পুলিশ সন্দেহ করছে, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের করোনা টিকা দেওয়ার রেকর্ড জাল করা হয়েছিল যাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেন।

বিবিসি বলছে, তল্লাশি অভিযানের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে এবং তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য কোনো ধরনের অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছেন বলসোনারো।

ব্রাজিলের সাবেক এই কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট কোভিড ভ্যাকসিনেশনের একজন সোচ্চার বিরোধী ছিলেন। করোনা মহামারির মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বারবার করোনা ভ্যাকসিন এবং এর কথিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন।

এছাড়া সাবেক এই কট্টরপন্থি নেতা সবসময়ই বলেছিলেন, তিনি কখনোই টিকা নেবেন না। এরপরও তিনি তার টিকা রেকর্ড প্রকাশ্যে আনতে অস্বীকার করেন। এই যুক্তির পেছনে তার দাবি ছিল, এতে সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে।

কিন্তু বলসোনারোর উত্তরসূরি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার নতুন সরকারের একজন কর্মকর্তা রায় দিয়েছেন, করোনা টিকা বিষয়ক এই তথ্যটি জনস্বার্থেই সবার সামনে আনা দরকার। আর সেই রেকর্ডে দেখা যায়, বলসোনারো ২০২১ সালে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন।

তবে পুলিশ মনে করছে, করোনার টিকা নেওয়ার এই রেকর্ডটি জাল করা হয়েছে এবং পরে এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। আর সেই তদন্তের অংশ হিসেবেই বুধবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় বলসোনারোর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশের মতে, ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা কোভিড-১৯ টিকার রেকর্ডে ‘মিথ্যা তথ্য’ ঢোকানো হয়েছিল যাতে ভ্যাকসিনেশন স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা সনদ হাতে পাওয়া যায়।

অবশ্য পুলিশের অভিযানের পরে কথা বলতে গিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো করোনা টিকার রেকর্ড জাল করার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে, কিছু মিথ্যা ছিল না।’

অবশ্য বলসোনারো যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনও গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে রেকর্ডে মিথ্যা তথ্য ঢোকানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা শপথ নেওয়ার কয়েক দিন আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় চলে যান বলসোনারো।

তবে ব্রাজিলের তৎকালীন এই প্রেসিডেন্ট কোন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন বা প্রবেশের সময় তিনি করোনা টিকা দেওয়ার কোনো রেকর্ড সরবরাহ করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে মার্কিন সরকার কোনও মন্তব্য করেনি।

এরপর গত ৩০ মার্চ তিনি ব্রাজিলে ফিরে আসেন এবং এরপর থেকে বলসোনারোকে পৃথক দু’টি তদন্তে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দু’বার পুলিশের সামনে হাজির হতে হয়েছে।

টিএম