চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে কানাডিয়ান দূতাবাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। মঙ্গলবারের ছবি

কানাডায় নিযুক্ত চীনা এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল কানাডিয়ান সরকার। ঝাও ওয়েই নামে টরন্টো-ভিত্তিক ওই কূটনীতিক কানাডার এক এমপিকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আর এরপরই কানাডার শীর্ষ এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে চীন। কানাডার পদক্ষেপের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেইজিং। বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের সমালোচক কানাডিয়ান এক আইন প্রণেতাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন চীনা কূটনীতিককে বহিষ্কারের জবাবে চীন সাংহাইতে নিযুক্ত কানাডার কনসালকে পাল্টা বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে। আর এতে করে চীন ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিবাদ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

চীন থেকে বহিষ্কার হওয়া কানাডীয় ওই কূটনীতিকের নাম জেনিফার লিন লালনডে। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনলাইনে প্রকাশিত এক ইংরেজি বিবৃতিতে জেনিফার লিন লালনডেকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। একইসঙ্গে ‘চীন এই ইস্যুতে আরও প্রতিক্রিয়া দেখানোর অধিকার রাখে’ বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।

এএফপি বলছে, লালনডেকে আগামী ১৩ মের মধ্যে চীন ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চীন (কানাডার এই ধরনের কর্মকাণ্ডের) তীব্র নিন্দা ও দৃঢ় বিরোধিতা করছে এবং কানাডার কাছে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘কানাডার অনৈতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে সাংহাইতে নিযুক্ত কানাডার কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনিফার লিন লালনডেকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন।’

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি টরন্টো-ভিত্তিক চীনা কূটনীতিক ঝাও ওয়েইকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বেইজিং এই পদক্ষেপ গ্রহণ করল। কানাডা থেকে বহিষ্কৃত ওই চীনা কূটনীতিকের নাম ঝাও ওয়েই। টরন্টো-ভিত্তিক এই কূটনীতিক কানাডার এক এমপিকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া কানাডীয় ওই পার্লামেন্ট সদস্য চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং বেইজিংয়ের বিতর্কিত বিভিন্ন নীতির কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

সোমবার প্রকাশিত বিবৃতিতে কানাডীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার বলেছি: আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করব না। কানাডায় কূটনীতিকদের সতর্ক করা হয়েছে যে, তারা যদি এই ধরনের আচরণে লিপ্ত হয় তবে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

অবশ্য চীনা সরকার কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল। গত সপ্তাহে এশীয় পরাশক্তি এই দেশটি বলেছে, ‘এটি (কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ) করার কোনো আগ্রহ তাদের নেই’। 

জবাবে অটোয়াতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তার ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বহিষ্কারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে দাবি করে, বেইজিং কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দূতাবাস চীন সরকারের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়েছে, ‘চীন দৃঢ়তার সাথে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। যদি কানাডিয়ান সরকার বেপরোয়া আচরণ করে, চীন অবশ্যই দৃঢ়তার সাথে এবং প্রবলভাবে লড়াই করবে।’

আর এরপরই কানাডীয় কূটনীতিককে পাল্টা বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিলো বেইজিং।

টিএম