ইমরানের কর্মীসমর্থকদের দমন-পীড়ন
পাকিস্তান পুলিশের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বলপ্রয়োগের অভিযোগ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীনেতা ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ দমন করতে তাদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক প্যাট্রিসিয়া গোসমান শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তানে সম্প্রতি ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ও সহিংসতা-পাল্টা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং এই সহিংসতা দমনে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা নজিরবিহীন বলপ্রয়োগ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
বিজ্ঞাপন
‘আমরা বলতে চাই, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন ও নিজেদের দাবি-দাওয়া উপস্থাপনের অধিকার প্রতিটি নাগরিকেরই আছে, তবে আন্দোলন যদি সহিংস হয়ে ওঠে— তার দায়ও কোনো না কোনোভাবে কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তায়।’
‘পাকিস্তানের সরকারের উচিত জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকারকে স্বীকার করে নেওয়া এবং যারা আন্দোলনে অপরাধমূলক তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকে— তাদেরকে শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখী করা। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পুলিশি বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের আন্দোলন দমন করা কখনও সমর্থনযোগ্য নয়।’
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়া পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেন এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সেনা সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন সেনাদপ্তর ও সেনানিবাসে হামলা চালান।
রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর, পেশোয়ার, করাচিসহ পাকিস্তানের প্রায় সব শহরে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত হয়েছে পিটিআই কর্মী-সমর্থকদের। সংঘাতে পিটিআই কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, মলোটভ ককটেল ছুড়েছেন বলে জানা গেছে। কিছু কিছু এলাকায় তারা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহারেরও সংবাদও পাওয়া গেছে।
পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশও ব্যাপকহারে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। মঙ্গলবার থেকে বুধবার— মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৮ জন।
এর বাইরে পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশ ও ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে শত শত পিটিআই নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন, দাঙ্গা, সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুক্রবারের বিবৃতিতে প্যাট্রিসিয়া গোসমান বলেন, ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বদা ন্যূনতম শক্তি ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনো সহিংস সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করতে হয়, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখনই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে— যখন অন্য যাবতীয় উপায় অকার্যকর হয়ে যায়। আর আইন প্রয়োগ সংস্থার কর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তখনই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন— যখন জীবন রক্ষার জন্য তা কঠিনভাবে অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এসএমডব্লিউ