থাইল্যান্ডের নির্বাচনে কাঁপন ধরানো কে এই পিটা?
থাইল্যান্ডের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাত
‘আজ নতুন একটি দিন। আশা করছি দিনটি উজ্জ্বল সূর্যালোক আর আশায় পরিপূর্ণ হবে।’ থাইল্যান্ডের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
পিটার রাজনৈতিক দল মুভ ফরোয়ার্ড রোববার দেশটির নির্বাচনে চমকপ্রদ ও আশ্চর্যজনক বিজয় অর্জন করেছে। প্রায় এক দশকের সেনা-সমর্থিত শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির ভোটাররা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলের তুলনায় মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে বেশি আসন ও ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। যে দেশটিতে অন্তত এক ডজন সফল অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেখানে মুভ ফরোয়ার্ডের এই অর্জনের ব্যাপকতা অনেক বেশি।
বিজ্ঞাপন
ব্যাংককে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, যুগের চেতনা বদলে গেছে। আর এটাই ছিল তার সঠিক সময়। ব্যাংককের ৩৩টি আসনের মধ্যে ৩২টিতেই জিতেছেন মুভ ফরোয়ার্ডের প্রার্থীরা।
বিরোধীদের সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠনের কাজ শুরু হতে এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি। থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর এখনও যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে নির্বাচনী ফলাফল। তবে নির্বাচনে বিশাল জয় পিটা ও তার দলকে নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে; যারা বছরের পর বছর সামরিক শাসনের কারণে হতাশ এবং পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে থাকা তরুণ ভোটারদের মাঝে আলোড়ন তৈরি করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালে ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টির সদস্য হিসাবে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পিটা তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। থাইল্যান্ডের বিলিয়নিয়ার ও সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক থানাথর্ন জুয়াংরুংরুয়াংকিতের প্রতিষ্ঠিত এই দলটি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভালো ফল করেছিল। পরিবর্তনের দাবিতে থাই রাজনীতিতে ব্যাপক কম্পন সৃষ্টি করেছিল ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি।
কিন্তু পরের বছর বিতর্কিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফিউচার ফরোয়ার্ডকে ভেঙে দিতে বাধ্য করা হয়। একই সঙ্গে থানাথর্নকে সংসদ সদস্য হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পরপরই দেশটিতে মুভ ফরোয়ার্ড নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে পিটাকে দলটির নতুন নেতা নির্বাচন করা হয়।
নিষেধাজ্ঞার পর সেই বছর থাইল্যান্ডে হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নেমে সংবিধান সংশোধন, নতুন নির্বাচন এবং মানবাধিকার কর্মী ও সরকারের সমালোচকদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। সাধারণ জনগণের পরিবর্তনের সেই আকাঙ্ক্ষা এবারের নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ডের জয়ে বড় অবদান রেখেছে। নির্বাচনে ২০২০ সালের আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রতিবাদী নেতাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে সরকারের তীব্র সমালোচনা করে দেশটিতে উদীয়মান তারকা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন পিটা লিমজারোয়েনরাত। এছাড়াও তিনি সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাব এবং রাজতন্ত্র সম্পর্কিত আইন সংস্কারের সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েও দেশটিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
সোমবার অতীতের সেই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করে পিটা বলেছেন, মুভ ফরওয়ার্ড রাজতন্ত্র সম্পর্কিত আইনের সংস্কার কাজ এগিয়ে নেবে। তিনি বলেছেন, আমরা এই সংসদে আইনটি পাস করব। আমরা রাজতন্ত্র এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কীভাবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত, সেটি নিশ্চিত করতে সংসদকে ব্যবহার করব। অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও বিস্তৃত আলোচনার মাধ্যমে এটি করা হবে।
দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা পিটা থাইল্যান্ডের ধনাঢ্যশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। তার চাচা সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সহযোগী ছিলেন।
পিটা লিমজারোয়েনরাত বলেছেন, নিউজিল্যান্ডে হাই স্কুলে পড়ার সময় রাজনীতি নিয়ে তার আগ্রহ তৈরি হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে থাই ইউটিউব প্রোগ্রাম এইম আওয়ারে অংশ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমাকে নিউজিল্যান্ডের মাঝামাঝি এক এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। তখন তিনটি (টিভি) চ্যানেল ছিল। আর এসব চ্যানেলে হয় আপনাকে অস্ট্রেলিয়ান সোপ অপেরা নতুবা সংসদে বিতর্ক দেখতে হবে।
ব্যাংককের থামমাসাট ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছিলেন পিটা। পরে বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তর এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ব্যবসায়। প্রথমে তার প্রয়াত বাবার রাইস ব্র্যান অয়েল কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্ব নেন। পরে রাইড-শেয়ারিং কোম্পানি গ্র্যাবের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তরুণ এই রাজনীতিক থাই অভিনেত্রী-মডেল চুটিমা টিনপানার্টকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তার সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায় পিটার। বর্তমানে সাত বছর বয়সী পিপিমের সিঙ্গেল বাবা তিনি। মুভ ফরওয়ার্ডের বেশ কিছু সমাবেশে পিপিমকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পিটার লিমজারোয়েনরাত।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি।
এসএস