ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মহারাষ্ট্রে বিতর্কিত চলচ্চিত্র দ্য কেরালা স্টোরি নিয়ে দাঙ্গায় অন্তত একজন নিহত ও আরও ৮ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ১০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট ঘিরে মহারাষ্ট্রের আকোলা শহরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির কর্তৃপক্ষ শহরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন  ও কারফিউ জারি করেছে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পুলিশের একজন নারী কনস্টেবল রয়েছেন। পুলিশ বলছে, চলচ্চিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টের প্রতিবাদ জানাতে শনিবার স্থানীয় বাসিন্দারা আকোলা থানার বাইরে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। এই সময় সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

দেশটির গণমাধ্যম বলছে, ইন্সটাগ্রামে দুই ব্যক্তির কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশট একজন শেয়ার করার পর এই সহিংসতার সূত্রপাত হয়েছে। ভারতীয় পুলিশের একজন কর্মকর্তা দেশটির দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, চ্যাটে কিছু বার্তা অন্য ব্যক্তির ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করেছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের কার্যালয় স্থানীয়দের প্রতি শান্তির আহ্বান এবং যারা সহিংসতায় অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।

গত সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি। মুক্তির কয়েক মাস আগেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই চলচ্চিত্রটি। ছবিতে দক্ষিণ রাজ্যের তিন ভারতীয় নারীর এক কাল্পনিক গল্প তুলে ধরা হয়েছে; যারা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেন।

দেশটির বিরোধী রাজনীতিকরা ছবিটিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছেন। তবে নির্মাতারা বলছেন, বছরের পর বছরের গবেষণা আর সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে ছবিটি।

• ইসলামিক স্টেটের ওপর নির্মিত ভারতীয় এই চলচ্চিত্র নিয়ে এত বিতর্ক কেন?

বিতর্কিত এই চলচ্চিত্রটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারাও। যাদের মধ্যে অন্তত দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও রয়েছেন। কর্ণাটকে চলতি মাসে এক নির্বাচনী সমাবেশে ছবিটির প্রশংসা করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকার ছবিটি নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে বিজেপি-শাসিত ভারতের দুই রাজ্য— উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে ছবিটিকে করমুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রোববার ভারত-শাসিত কাশ্মিরের জম্মু জেলার একটি মেডিকেল কলেজেও ছবিটি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে অন্তত দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছবিটি নিয়ে শেয়ার করা একটি পোস্টের কারণে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এই অস্থিরতার জন্য নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে ‘সিনেমার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাবানল’ ছড়িয়ে দিতে বিজেপি সরকার উৎসাহ জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস