উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘাত বন্ধে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে উভয়পক্ষ। শনিবার (২০ মে) রাতে যুদ্ধরত দলগুলো সাত দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

রোববার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদানের শক্তিশালী এই দুই বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ আফ্রিকার এই দেশকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে নিমজ্জিত করেছে। এছাড়া টানা ছয় সপ্তাহ ধরে চলা এই যুদ্ধে সুদানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

রয়টার্স বলছে, শনিবার রাতে যুদ্ধরত উভয়পক্ষ সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করে। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার খার্তুম সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

অবশ্য সংঘাত বন্ধে এর আগেও বেশ কয়েক দফায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং কোনও ধরনের গোপনীয়তা ছাড়াই প্রকাশ্যে হামলা-পাল্টা হামলার মাধ্যমে সেসব যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনও করা হয়।

তবে সর্বশেষ স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি মার্কিন-সৌদি এবং আন্তর্জাতিকভাবে-সমর্থিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রয়োগ করা হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে বিশদ কোনও বিবরণ দেওয়া হয়নি।

শনিবার রাতের এই চুক্তিতে মানবিক সহায়তা বিতরণ, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো পুনরায় চালু এবং হাসপাতাল ও প্রয়োজনীয় সরকারি অবকাঠামোগুলো থেকে বাহিনী প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘বন্দুকগুলোকে নীরব করার এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার এটাই প্রয়োজনীয় সময়।’

রয়টার্স বলছে, সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে লড়াইয়ের ফলে আফ্রিকার এই দেশটিতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, নগদ অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মজুদ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং ব্যাপক লুটপাট ব্যাংক, দূতাবাস, সাহায্য গুদাম এবং এমনকি গির্জাগুলোকেও ক্ষতির মুখে ফেলছে।

সহায়তা সংস্থাগুলো বলেছে, তারা রাজধানী খার্তুমে কর্মীদের জন্য নিরাপদ পথ এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টির অভাবে পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে অক্ষম।

শনিবার দক্ষিণ ওমদুরমান এবং উত্তর বাহরিতে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। এই দু’টি শহর খার্তুম থেকে নীল নদের ওপারে অবস্থিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওমদুরমানে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার কাছেও কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ওমদুরমানের আল-সালহা পাড়ায় বসবাসকারী ৩৩ বছর বয়সী সানা হাসান ফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আজ সকালে আমরা ভারী কামানের গোলাবর্ষণের সম্মুখীন হয়েছিলাম, পুরো বাড়িটি কাঁপছিল। এটা ভয়ঙ্কর, সবাই তাদের বিছানার নিচে শুয়ে ছিল। যা ঘটছে তা কেবল একটি দুঃস্বপ্ন।’

আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ আবাসিক এলাকাগুলোতে অবস্থান করছে। আর সেখানেই নিয়মিতভাবেই ক্রমাগত বিমান হামলা চালাচ্ছে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী। খার্তুমের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, শনিবারের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল, যদিও বিক্ষিপ্ত গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যকার এই লড়াইয়ের ফলে প্রায় ১১ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, টানা ছয় সপ্তাহের এই সংঘাতে প্রায় ৭০৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৫ হাজার ২৮৭ জন আহত হয়েছেন।

টিএম