ড্রোন হামলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত একটি তামাক কারখানায় কাজ করছেন একজন দমকলকর্মী

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন হামলার পর ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি বিমান বাহিনীর সদস্যদের ‘বীর’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

রোববার (২৮ মে) রাতের আঁধারে চালানো ওই হামলাকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন।

রাশিয়ার নিক্ষেপ করা তথাকথিত কামিকাজে ড্রোনগুলোর বেশিরভাগই ভূপাতিত করার বিষয়ে ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডাররা ঘোষণা দেওয়ার পর তাদেরকে ‘বীর’ বলে অভিহিত করেন জেলেনস্কি।

রাশিয়ার ওই হামলার পর ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে দুইজন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রাশিয়া সম্প্রতি কিয়েভের ওপর আক্রমণ বেশ জোরদার করেছে। এর মাধ্যমে মূলত ইউক্রেনের রাজধানীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে চাইছে রুশ বাহিনী।

রোববার রাতের ওই হামলার সময় উত্তর-পশ্চিমের ভলিন থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক পর্যন্ত ইউক্রেনের ১২টি অঞ্চলে বিমান হামলার সতর্কতা সক্রিয় করা হয়।

চলতি মাসে কিয়েভে রাশিয়ার এটা ১৪তম বিমান হামলা এবং সেটিও এমন এক সময় হলো যখন ইউক্রেনের রাজধানীর জনগণ ১৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো শহরের প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী অর্থাৎ কিয়েভ দিবস উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো রাতের আঁধারে হওয়া এই হামলাকে ‘বিশাল’ বলে বর্ণনা করেন এবং ড্রোন ‘একসাথে বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসছে’ বলে সতর্ক করে দেন।

পরে একটি তামাক কারখানাসহ কয়েকটি ভবনে ড্রোনের টুকরো পড়ে আগুন ধরে যায়। অন্যদিকে কিয়েভের পাশাপাশি ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমে জাইটোমির শহরে রুশ হামলায় অন্তত ২৬টি আবাসিক ভবনের পাশাপাশি স্কুল এবং মেডিকেল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অনলাইন নিউজ সাইট ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা জানিয়েছে।

ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডাররা বলেছেন, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ইরানের তৈরি ৫৯টি ড্রোনের মধ্যে ৫৮টি গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

আর এরপরই ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন: ‘যতবার আপনি শত্রুদের নিক্ষিপ্ত ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করেন, ততবারই মানুষের জীবন রক্ষা হয়... আপনারা বীর।’

পরে পৃথক এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন: ‘(রুশ হামলা সত্ত্বেও) বেশিরভাগ ধ্বংস ও বিপর্যয় রোধ করা গেছে এবং ড্রোন হামলায় যে প্রাণহানি হতো সেটি থেকেও মানুষকে রক্ষা করা গেছে। যারা এটি সম্ভব করেছে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।’

রাশিয়া সম্প্রতি কিয়েভের ওপর আক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এসব হামলায় রাশিয়া তথাকথিত কামিকাজে ড্রোনের পাশাপাশি ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কিয়েভের দীর্ঘ-প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণের আগে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে রুশ সামরিক বাহিনী।

টিএম