করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী বাংলাদেশ সফর ঘিরে নিজের খুশির কথা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার বাংলাদেশে আসার আগে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী দু’দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুস্পষ্ট কিছু বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার সমাধিতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সূচনা হওয়ার পর তার প্রথম বিদেশ সফর একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশে হচ্ছে; যে দেশটির সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সু্বর্ণজয়ন্তীর উৎসবে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

ভারত ছাড়ার আগে বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি খুশি যে, কোভিড-১৯ মহামারির সূচনা হওয়ার পর আমার প্রথম বিদেশ সফরটি আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশে হবে; যে দেশের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং জনগণ থেকে জনগণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

শুক্রবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

বাংলাদেশ সফরের আগের সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধু গত শতাব্দীর অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন; যার জীবন এবং আদর্শ লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিতে যাওয়ার অপেক্ষা করছি।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি পৌরাণিক ঐতিহ্যের ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম প্রাচীন যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে দেবী কালীর ‍পূজা করার অপেক্ষায় রয়েছেন। মোদি বলেন, ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা করার প্রত্যাশা করছেন; যেখান থেকে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর তার শুদ্ধ বাণী প্রচার শুরু করেছিলেন।

‘গত বছরের ডিসেম্বরে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের পর আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গঠনমূলক আলোচনা করবো। আমি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময়ের অপেক্ষায় রয়েছি।’

তিনি বলেন, আমার এই সফর কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রগতির প্রশংসা করার একটি উপলক্ষ হবে না। বাংলাদেশের এমন অর্জনে ভারতের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত থাকবে। সফরে করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ের প্রতি ভারতের সমর্থন এবং সংহতিও প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মোদির এই সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, পরিবেশগত সুরক্ষা তথা দুর্যোগ প্রশমনে সহযোগিতা, দুই দেশের ন্যাশনাল স্টাফ কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি সহযোগিতাসহ সীমান্ত সুরক্ষা সংক্রান্ত ইস্যুগুলোয় সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

মোদির সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক ইস্যু আছে। আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি সেটায় যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী; এ বিষয়টিতেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি আমরা। ভারতের সঙ্গে আমাদের যেসব বড় বড় সমস্যা সমাধান হয়নি সেগুলোও আমরা আলোচনায় তুলব।

নরেন্দ্র মোদির এ সফরে ঢাকা-নয়া দিল্লির মধ্যে কয়টি সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সঠিক সংখ্যা আমি বলতে পারব না। অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে। যেগুলো আমাদের প্রধান ইস্যু সেগুলোর ওপরেই স্মারকগুলো হচ্ছে। তবে পাঁচটার মতো হতে পারে।

আগামীকাল সকাল ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ছাড়াও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসবেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। একই দিন বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন মোদি।

এছাড়া নরেন্দ্র মোদির এই সফরে আরও সাতটি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এগুলো হলো, শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সমাধি, বাংলাদেশের কাছে ভারতের ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু, দু’টি সীমান্ত হাট চালু এবং স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন।

সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ সকালে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই দিনে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে দু’টি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করবেন মোদি। ওইদিন বিকেলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে ওই রাতেই তিনি দিল্লির উদ্দ্যেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।

এসএস