একটানা কতক্ষণ হাত উঁচু করে রাখতে পারেন? হয়তো বেশ কয়েক মিনিট এভাবে থাকতে পারবেন। তবে পাঁচ দশক ধরে আকাশের দিকে হাত তুলে থাকতে পারবেন কি?

ভারতের কুম্ভমেলায় নাগা সন্ন্যাসীদের ভিড়ে আলাদাভাবে নজর কাড়েন এক সাধু। তিনি অমর ভারতী। যিনি নাকি গত পাঁচ দশক ধরে তার ডান হাতটি উপরের দিকে তুলে রেখেছেন। তার দাবি, বিশ্বশান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এমন করেছেন।

সত্তরের দশকের গোড়ায় স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে নাকি পথে বেরিয়ে পড়েছিলেন অমর ভারতী। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার ছাড়তে বিশেষ চিন্তাভাবনা করেননি তিনি।

বহু সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন এই সাধু। সেগুলোতে অমর ভারতীকে নিয়ে নানা পরস্পর বিরোধী তথ্যও মেলে। অনেকের দাবি, স্ত্রী ও ৩ সন্তান তো দূরের কথা, তিনি নাকি কখনো সংসারই পাতেননি।

অমর ভারতী কোথাকার বাসিন্দা, সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই সাধুর বয়স নিয়েও মতভেদ রয়েছে। একাংশের দাবি, তিনি সত্তরোর্ধ্ব। অন্য পক্ষের মতে, তার বয়স ৬৬।

এই সাধুর বয়স বা সংসারধর্ম পালন করা নিয়ে নানা কথা হাওয়ায় ভেসে বেড়ালেও তিনি যে দীর্ঘ দিন ধরে হাত উঁচিয়ে রয়েছেন, তা নিয়ে বিশেষ দ্বিমত নেই বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমের।

সংবাদমাধ্যমের দাবি, ১৯৭৩ সালে সংসার ছেড়ে বিবাগী হয়েছিলেন অমর ভারতী। একইভাবে হাত তুলে থাকায় প্রথম দু’বছর অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা সইতে হয়েছে তাকে। সে সময় থেকেই ডান হাত অসাড় হয়ে যায়।

দীর্ঘ দিন ধরে হাতের নড়াচড়া বন্ধ থাকায় অমর ভারতীর ডান হাতের আঙুলগুলো কুঁকড়ে গিয়েছে। হাতটি নামানোর চেষ্টা করলেও স্নায়ুগুলি সাড়া দেবে না। ফলে সে চেষ্টা করলে তার হাত ভেঙে যেতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের।

সাধুর এক পরিচিতের দাবি, এত বছর পর অমর ভারতীয় ডান হাত মোড়ানোর চেষ্টা করা হলে প্রবল যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে তাকে। তবে শারীরিক যন্ত্রণার থেকেও তার আধ্যাত্মিক যন্ত্রণা হবে। কারণ, বিশ্বশান্তির চেষ্টায় হাত তুলেছেন অমর ভারতী।

ভারতীর হাত নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব নয় বলে মত চিকিৎসকদের। এত বছর ধরে একই অবস্থায় থাকার জেরে তার ডান হাতের পেশিগুলো বাতের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সেগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তাতে কোনো ওষুধই কার্যকর হবে না।

এক চিকিৎসকের দাবি, ভারতীর হাড়ের কাঠামো এখনো যথাযথ রয়েছে। হাতটি মুড়তে গেলে হয়তো গাছের ডালের মতো মট করে ভেঙে যাবে না। তবে তরুণাস্থি শুকিয়ে যাওয়ায় অস্থিগ্রন্থি ভেঙে যাবে। মোদ্দা কথা, তার হাত টুকরো টুকরো হতে পারে।

কুম্ভমেলায় তাকে ঘিরে ভক্তদের জমায়েত, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার ঝলকানি— এ সবই অতি পরিচিত দৃশ্য হয়ে গিয়েছে।

ভারতীর দাবি, শিবের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি। ডান হাত তুলে রাখাটা তার ভক্তির প্রতীক বলেও জানিয়েছেন।

ভারতীকে নিয়ে ভক্তদের অতিরঞ্জনেরও শেষ নেই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর কাছে তার এক ভক্তের দাবি, শূন্যে হাত তুলে আরও শক্তি অর্জন করেছেন ভারতী। দীর্ঘায়ু হয়েছেন। সঙ্গে অন্যান্য ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২০-’২১ সালে ভারতীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে বেশ হইচই হয়েছিল। তার দাবি, ঘুমোনোর সময়ও কখনো হাত মুড়তেন না তিনি।

কত বছর ধরে এ ভাবে হাত তুলে রাখতে চান? কুম্ভমেলায় ভারতীর কাছে প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক। তাতে নাকি সাধুর উত্তর ছিল, ভবিষ্যতে কী হবে সে কথা এখনও জানেন না তিনি।

বিশ্ব জুড়ে অশান্তি, হানাহানির খবরে বিচলিত বোধ করেন ভারতী। তিনি বলেছিলেন, আমি বেশি কিছু চাই না। নিজেদের মধ্যে কেন আমরা এত লড়াই করি? পরস্পরকে এত ঘৃণার চোখেই বা দেখি কেন?

সংসারের মায়া কাটিয়ে ঘুরে বেড়ালেও বেশ কয়েকটি চাহিদা রয়েছে এ সাধুর। তার কথায়, ‘‘দেশের সব মানুষ শান্তিতে থাকুন, এটাই চাই। বিশ্ববাসী শান্তিতে থাকুক, এ চাহিদাও রয়েছে।

ওএফ