ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার বালেশ্বর জেলায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরের দিকে দুর্ঘটনাস্থল বাহাঙ্গা বাজার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতা, সেখানেই এ ঘোষণা দেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যারা আছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের ১ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।

‘বাংলার (পশ্চিমবঙ্গের) মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাজ্যের যারা আহত হয়েছেন, প্রয়োজনে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাদের চিকিৎসা করানো হবে,’ ঘোষণায় বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শনিবার বেলা ১১ টা ৩৯ মিনিটে বাহাঙ্গা বাজারের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ঘটনাস্থলে পৌঁছে অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলেন মমতা, যথাযথ তদন্তের আহ্বানও জানান।

পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রেলের মনে হয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।’ এ সময় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীও তার পাশে ছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় ঘটে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা। শালিমার থেকে চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালবাহী ট্রেন— এই তিনটি ট্রেন এই দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটল— সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি এখনও। শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাইনচ্যুত হয় এবং ট্রেনের কয়েকটি বগি বিপরীত লাইনে আড়াআড়িভাবে পড়ে যায়। কাছাকাছি সময়েই বিপরীত লাইন ধরে হাওড়া থেকে আসা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ওই সময় সেখানে পৌঁছায় এবং লাইনের ওপর পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলোর সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষের ফলে সেটিও লাইনচ্যুত হয়।

ওই সময় সিগনালে অপেক্ষমান ছিল একটি মালবাহী ট্রেন। দুর্ঘটনায় ট্রেনটির কী ভূমিকা ছিল—  জানা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর মালগাড়ির ওপর উঠে গিয়েছিল করমণ্ডলের ইঞ্জিন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে যত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেসবের মধ্যে গতকাল শুক্রবারের দুর্ঘটনাটি ছিল অন্যতম ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী।

ইতোমধ্যে শুক্রবারের দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক হতাহতদের জন্য শনিবার রাজ্যে এক দিন শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনাটি হয়েছিল ১৯৮১ সালে। ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়ে বিহারের একটি যাত্রীবাহী ট্রেন নদীতে পড়ে গিয়েছিল সেবার। এতে ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।