স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনায় ভারতের ওড়িশায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬১ জন মানুষ। এ দুর্ঘটনার পর এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ আছেন। নিখোঁজদের খুঁজে পেতে এখন ছোটাছুটি করছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা।

কেউ কেউ প্রিয়জনকে খুঁজে পাচ্ছেন। কেউ এখনো হতাশায় প্রহর গুণছেন। আবার কেউ কেউ স্বজনকে খুঁজে পাচ্ছেনও— কিন্তু সেটি মৃত অবস্থায়।

তাদেরই একজন সুরাভীর। যার মা ও নানি গতকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের ভেতর ছিলেন। সারারাত হন্য হয়ে খোঁজার পর সকালে মায়ের মৃতদেহের খোঁজ পেয়েছেন তিনি।

সুরাভীর জানিয়েছেন, তার মা-নানি ওষুধ কেনার জন্য ট্রেনে করে শহরে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পরই দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে মা ও নানিকে খোঁজা শুরু করেন এবং কিছুক্ষণ বাদে নানিকে পেয়েও যান। কিন্তু কোনোভাবেই আর মাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

কোনো উপায়ন্তর না থেকে রাতে মায়ের একটি ছবি বন্ধু ও পরিচিতদের কাছে পাঠান। এছাড়া সর্বশেষ তার মা কোন কাপড় পরা ছিলেন সেটিরও বর্ণনা দেন।

এরপর আজ শনিবার সকালে এক বন্ধু তাকে একটি মৃতদেহের ছবি পাঠায়। সেই ছবিতে সুরাভী দেখতে পান এটি তারই মা এবং তিনি যে কাপড়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন তার মা সেই কাপড়টিই পরে আছেন।

এ ব্যাপারে সুরাভীর বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর আমি নানীকে খুঁজে পাই। তিনি বেঁচে ছিলেন। কিন্তু আমার মা নিখোঁজ ছিলেন। আমরা সব জায়গায় তার খোঁজ করি, কিন্তু কোথাও পাইনি।’

‘আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করব, তাই মায়ের একটি ছবি বন্ধু ও পরিচিতজনদের পাঠাই। এছাড়া তার মোবাইল নাম্বার এবং তাকে সর্বশেষ যে কাপড় পরতে দেখেছিলাম সেই কাপড়ের বর্ণনাও দিয়েছিলাম।’

‘আজ সকালে আমার এক বন্ধুর কাছে শুনতে পাই— তারা আমাকে একটি দেহের ছবিও পাঠায়— এটি ছিল আমার মা। সে ওই কাপড়টিই পরে ছিল।’

‘আমি এখন বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে যেতে চাই যেন তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করতে পারি। কিন্তু এখানে অনেক হট্টগোল— কোনো ট্রেন নেই, রাস্তাঘাট বন্ধ।’

এদিকে শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যার সময় ওড়িশার বালেশ্বরে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনার পর আহত ও নিহতদের উদ্ধারে টানা ১৮ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চলে। উদ্ধার অভিযান শেষে জানানো হয়, ঘটনাস্থল থেকে ২৬১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

এমটিআই