ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকজন তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষের মুহূর্তের ভয়ানক বর্ণনা দিয়েছেন। দেশটির ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী এই ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়ার ঘটনাকে অলৌকিকও বলছেন অনেকে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওড়িশার বালেশ্বরে তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষের ১৮ ঘণ্টার পর শনিবার বিকেলের দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেছেন, বালাসোর দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেছেন সঞ্জয় মুখিয়া। করমন্ডল-শালিমার এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে চেন্নাইয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দিনমজুর হিসাবে চেন্নাইয়ে কাজ করেন সঞ্জয়। ট্রেনটি যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তখন তিনি ট্রেনের টয়লেটে যাচ্ছিলেন।

বিহারের সঞ্জয় মুখিয়া দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, সবকিছু কাঁপছিল এবং আমরা মনে করেছিলাম কোচটি সম্ভবত উল্টে যাচ্ছে।’ দুর্ঘটনার পরপরই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে।

দুর্ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায়, একটা কোচের ওপর আরেকটি উঠে গেছে। দুমড়ে-মুচড়ে গেছে ট্রেনের অনেক বগি। যাত্রীদের মালামাল চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহ উদ্ধার করে সারিবদ্ধভাবে রেখেছে। আর পাশের ধ্বংসাবশেষ থেকে বের করে আনা হচ্ছে অন্যান্যদের।

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অপর এক যাত্রী বলেন, তিনি ট্রেনের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগির বিভিন্ন স্থানে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে যেতে দেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার সময় আমি ঘুমাচ্ছিলাম। প্রায় ১০-১৫ জন মানুষ হঠাৎ আমার ওপর আছড়ে পড়ে। আমি যখন কোচ থেকে বেরিয়ে আসি, তখন দেখলাম চারপাশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আছে। এক জায়গা কারও পা পড়ে আছে তো অন্য জায়গায় হাত। কারও কারও মুখ চেনারও উপায় নেই।’

মোহাম্মদ আকিব ২৬ জনের একটি বড় দলের সাথে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। এই দলের বেশিরভাগই কেরালাগামী শিক্ষার্থী। আকিব বলেন, ‘আমরা ট্রেনের এস-৪, এস-৩, এস-২ কোচে ছিলাম। আমরা হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। এই শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোচগুলো উল্টে যায়। তবে আমরা সবাই নিরাপদ ছিলাম।’

ক্ষতিগ্রস্ত কোচের জানালা দিয়ে এই দলের সব সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। আকিব বলেন, আমরা ভাগ্যবান যে বেঁচে আছি। আমরা এখন আর কোথাও যেতে চাই না। আমরা বিহারে ফিরতে চাই।

এসএস