লাইনচ্যুত ট্রেনের ওপর উঠে গেছে আরেকটি ট্রেন। দুমড়ে মুচড়ে গেছে বগি। পাশে কাত হয়ে পড়ে আছে মালগাড়ি। এমনই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা গেছে ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরের রেলওয়ে স্টেশনে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে ঘটে গেছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা।

করমন্ডল এক্সপ্রেস, হাওরা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, মালগাড়ি– তিন ট্রেনের দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৮০ ছাড়িয়েছে। এই দুর্ঘটনায় কেবল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশেরই ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। মৃত্যুমিছিল দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে বেঁচে ফিরেছেন অনেকেই। তাদের একজন পশ্চিমবঙ্গের মহিষাদলের এক পরিবারের তিন সদস্য। শরীরে আঘাত নিয়ে বাড়ি ফেরার পর তারা বলছেন, যেন পুনর্জন্ম হল।

দেশটির সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই পরিবার শুনিয়েছে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা। তারা বলেছেন, শুক্রবার চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন। দম্পতির সঙ্গে ছিল তাদের এক ছেলে। শালিমার-চেন্নাই করমন্ডল এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তারা। কিন্তু খানিকটা এগোতেই বিকট কানফাটা শব্দ! ওড়িশার বালেশ্বরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের কাছে পৌঁছাতেই আসন থেকে পড়ে ছিটকে যান তিনজনই।

কয়েক মুহূর্ত কাটতে না কাটতেই বুঝতে পারেন, ট্রেন বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তাদের মধ্যে সুব্রত পালের পায়ে আঘাত লাগে। স্ত্রী দেবশ্রীর হাতে কাটাছেঁড়ার চিহ্ন। এরপর কোনো রকমে নিজেদের বাঁচিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পান তারা। শেষে উদ্ধারকারী ট্রেনে শনিবার সকালে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন সুব্রত পাল ও দেবশ্রী পাল।

ফিরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন দেবশ্রী। এত বড় দুর্ঘটনার পর যে তারা সশরীরে ফিরতে পেরেছেন, তা যেন তাদের কাছে ‘পুনর্জন্ম’।

দেবশ্রী পালের কথায়, ‘মনে হচ্ছিল, আমরা বোধহয় আর বাঁচব না। বাচ্চাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বিকট একটা শব্দ শুনলাম। আমরা পড়ে গেলাম। উপর থেকে জিনিসপত্র পড়ে গেল। ছেলে কোথায় ছিটকে চলে গেল। কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর বুঝলাম, আমরা বড়সড় দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছি। এখন মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেলাম।

এসএস