গত ১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করছেন মিয়ানমারের লাখ লাখ নাগরিক

২০২২ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান দেশটির নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন। শুক্রবার নরওয়েজিয়ান এক অধ্যাপক মিয়ানমারের এই আন্দোলনের শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হওয়ার খবর জানিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব অসলোর সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান স্টোক বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছে দেশটির নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন।

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণসমাবেশ করছে। যা এখন পর্যন্ত অহিংস উপায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

• চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হবে অক্টোবরে
• সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মনোনীত হয়েছেন
• নরওয়ের একজন সাংসদ শান্তিতে বেশ কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করেছেন
• ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরই তার মনোনীত প্রার্থীরা নোবেল পেয়েছেন
• গত বছর জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি শান্তির নোবেল পায়

অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান স্টোক বলেন, এটি গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন। এই আন্দোলন যদি সফল হয় তাহলে মিয়ানমারের বাইরেও এটি অহিংস-গণতন্ত্রপন্থী অন্যান্য আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। অহিংস এই আন্দোলন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদী শক্তির চাপের মুখে রয়েছে গণতন্ত্র।

মিয়ানমারের বিনোদন জগতের তারকারাও জান্তাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন

মিয়ানমারের স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এইপিপি) বলছে, দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সহিংসতায় ৩২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া আটক করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার জনকে।

১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনাবাহিনী আবারও অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির ক্ষমতায় এসেছে। মিয়ানমারের এই নেত্রী ও তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডির) অনেক নেতাকর্মীকে বর্তমানে রাজধানী নেইপিদোর অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি করে রেখেছে সামরিক বাহিনী।

চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু গত সপ্তাহে অধ্যাপক স্টোক ও অন্য আরও পাঁচ অধ্যাপক মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামীদের অসহযোগ আন্দোলনকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব জমা দেন। যে কারণে চলতি বছরের পরিবর্তে আগামী বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায় মিয়ানমারের এই আন্দোলন।

প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সাবেক নোবেলজয়ী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ লাখ লাখ মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নোবেল পুরস্কারের জন্য পছন্দের প্রার্থীদের মনোনীত করেন।

চলতি বছরের নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের সময় ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়।

১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় আন্দোলনে যোগ দেন দেশটির সর্বস্তরের মানুষ

মনোনীত হওয়া মানেই পুরস্কারের জন্য নোবেল কমিটির অনুমোদন আছে বিষয়টি তেমন নয়। তবে মনোনীতদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত বিজয়ী বেছে নিতে পারে নোবেল কমিটি। নরওয়ের আইনপ্রণেতারা চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যাদের নাম মনোনয়ন দিয়েছেন; তাদের মধ্যে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থানবার্গ, রাশিয়ার বিরোধীনেতা অ্যালেক্সি নাভালনি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সংস্থাটির দরিদ্র দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সুষম বণ্টনের লক্ষ্যে গঠিত উদ্যোগ ‌‘কোভ্যাক্স’ও রয়েছে।

জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলার লড়াইয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে পরিণত হওয়া কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ পরিবেশ আন্দোলনের জন্য গড়ে তুলেছেন ‌‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন করছেন তিনি।

অন্যদিকে, রাশিয়ার শিক্ষাবিদ ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী অ্যালেক্সি নাভালনি দেশটিতে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। রাশিয়ার বিরোধী এই নেতাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন নরওয়ের সাবেক মন্ত্রী ওলা এলভেসতুয়েন।

২০২১ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম আগামী অক্টোবরে ঘোষণা করা হবে। গত বছর জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি শান্তির নোবেল পায়।

এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোপন মার্কিন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ও বিতর্কিত ওয়েবসাইট উইলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং তথ্যের অবাধপ্রবাহ নিশ্চিতে কাজ করে আসা যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম অধিকারবিষয়ক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, ফ্রান্সের রম্যসাময়িকী শার্লি হেবদোর সাংবাদিক জৈনব এল রাজৌ, হংকংয়ের সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট হংকং ফ্রি প্রেস এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার ও প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকায় রয়েছে। 

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।

এসএস