জাতিসংঘ বলছে, পূর্ব-আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার সহিংসতা কবলিত তাইগ্রে অঞ্চলের পাঁচটি ক্লিনিকে ৫ শতাধিক নারী ধর্ষণের চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে শুক্রবার সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইথিওপিয়ায় নিয়োজিত সংস্থাটির দাতা উপ-সমন্বয়কারী ওয়াফা জানিয়েছেন, তাইগ্রের নারীরা বলেছেন, সশস্ত্র পুরুষরা তাদের ধর্ষণ করছেন। অস্ত্রের হুমকির মুখে স্বজনদের ধর্ষণে বাধ্য করা হচ্ছে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের। 

তিনি বলেন, তাইগ্রের মেকেলে, আদিগ্রাত, উকরো, শায়ার এবং অ্যাক্সাম শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল স্থাপনায় কমপক্ষে ৫১৬ জন  ধর্ষিত নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার ভয়াবহতায় অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চিকিৎসা দিতে পারছে না। এছাড়া ধর্ষণ নিয়ে সামাজিক কুসংস্কারও আছে। যে কারণে অনেকেই ধর্ষণের শিকার হলেও চিকিৎসা নিচ্ছেন না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূত তায়ে আটসকেসেলাসি আমদি রয়টার্সকে বলেছেন, তার সরকার যৌন সহিংসতার এসব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং ঘটনা তদন্তে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন মোতায়েন করেছে।

তিনি বলেন, যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে ইথিওপিয়ার জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। ঘৃণ্য এই কাজের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে পুরো আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাইগ্রের কয়েক ডজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেছেন, সংঘাতে প্রতিবেশি ইরিত্রিয়ার সৈন্যরা নিয়মিতভাবে তাইগ্রের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, বাড়িঘর ও ফসল লুটপাট করছেন।

শুক্রবার ইরিত্রিয়ার তথ্যমন্ত্রী ইয়েমানি গেব্রিমেস্কেল জাতিসংঘের বিবৃতির ব্যাপারে বলেন, যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের অভিযোগ ইরিত্রিয়ার সমাজের জন্য ন্যাক্কারজনক। তারা যদি এমন করে থাকেন, তাহলে তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।

তাইগ্রে অঞ্চলের সংঘাত-সহিংসতায় প্রতিবেশি ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের অংশ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি। যদিও মঙ্গলবার ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ তার দেশে ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন। 

সোমবার তাইগ্রে অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ও হামলার অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক ডজন শীর্ষ কর্মকর্তা। বিশেষ করে ধর্ষণ এবং অন্যান্য ভীতিকর যৌন সহিংসতা বন্ধের ডাক দিয়েছেন তারা।

গত নভেম্বরে ইথিওপিয়ার তাইগ্রেতে সরকারি সৈন্য এবং ওই অঞ্চলের সাবেক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ৫০ লাখ মানুষের পার্বত্য অঞ্চল তাইগ্রের এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ও লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

তাইগ্রের নৃশংস সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকন তাইগ্রের সংঘাতকে ‌‘জাতিগত নিধন’ অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছেন। যদিও ইথিওপিয়া মার্কিন এই মন্ত্রীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস