ফাইল ছবি

উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘাত যেন দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। দেশটির রাজধানী খার্তুমে জ্বালানি অবকাঠামোতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র কারখানা দখলে নিতে লড়াই আরও জোরদার করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক দলগুলো। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড সুদানের রাজধানী খার্তুমে একটি জ্বালানি অবকাঠোমোকে গ্রাস করেছে। এছাড়া যুদ্ধ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র কারখানার দখল পেতে প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক দলগুলোর মধ্যে আরও জোরদার লড়াই শুরু হয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, বুধবার আরব স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর লাইভ ফুটেজে রাজধানী খার্তুমের একটি জ্বালানি-সংরক্ষণাগারে বিশাল আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। এই জ্বালানি অবকাঠামোটি মূলত একটি সামরিক ঘাঁটি এবং অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছাকাছি অবস্থিত।

আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম এই জ্বালানি অবকাঠামোটির মালিক যে অস্ত্র সংস্থা, তারা ইয়ারমুক আবাসিক এলাকায় কাজ করে এবং সেখানকার বেসামরিক ব্যক্তিরা বলেছেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে জ্বলা এই আগুন শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ খার্তুমের পুরো এলাকাকে গ্রাস করবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

মূলত একটি সামরিক ঘাঁটি ঘিরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে লড়াই করেছে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)।

উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে আট সপ্তাহে পা দেওয়া এই লড়াইয়ের জেরে রাজধানী খার্তুমসহ অন্য এলাকায় লুটপাট ও অরাজকতাও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভারী লড়াইয়ের পরে পিছু হটার আগে ইয়ারমুক অস্ত্র কমপ্লেক্স ডিপো ও কারখানার ওই এলাকায় আক্রমণ করেছিল আরএসএফ।

আল জাজিরার হিবা মরগান ওমদুরমান থেকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন ওই কারখানার কাছে আরএসএফ এবং সুদানী সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘তীব্র লড়াই’ এখনও চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা ভারী কামান, বিমান হামলা এবং ছোট অস্ত্রের গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন।

মরগান বলেছেন, ‘আরএসএফ বলেছে তারা এখন অস্ত্র প্রস্তুতকারী এই সংস্থার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু সুদানের সেনাবাহিনী বলছে- লড়াই এখনও চলছে। তারা এখনও আরএসএফকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে এবং কোম্পানির অস্ত্র ডিপো সম্পূর্ণরূপে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’

গত ১৫ এপ্রিল খার্তুমে সংঘাত শুরু হওয়ার পর আরএসএফ যোদ্ধারা দ্রুত রাজধানী খার্তুমের কিছু অংশ দখল করে নেয়। তবে সেনাবাহিনীর বিমান হামলা এবং আর্টিলারি গোলাবর্ষণে আধাসামরিক এই বাহিনীকে তাদের জায়গা থেকেই খুব সামান্যই বিতাড়িত করা গেছে।

কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় আরএসএফ গোলাবারুদ এবং জ্বালানি সরবরাহে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইয়ারমুকের কাছে বসবাসকারী নাদের ইউসেফ বলেন, ‘গতকাল থেকে বিমান ও আর্টিলারি ব্যবহার করে লড়াইয়ের পাশাপাশি স্থলেও সহিংস যুদ্ধ হয়েছে’। জ্বালানি স্টোরেজ স্থপনাগুলো কাছাকাছি থাকার কারণে ‘যেকোনও বিস্ফোরণ বাসিন্দাদের এবং পুরো এলাকাকে ধ্বংস করতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

অবশ্য এই সংঘাত সুদানে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া এই যুদ্ধ সুদানের মধ্যে ১২ লাখেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। এছাড়া আরও প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে।

অন্যদিকে রাজধানী খার্তুমেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই শহরটিতে অবশিষ্ট যেসব বাসিন্দা রয়েছেন তারা যুদ্ধ, বিমান হামলা এবং লুটপাটের শঙ্কায় রয়েছেন।

মূলত সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এর আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছিল যুদ্ধরত উভয়পক্ষ। তবে গত শনিবার রাতে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে লড়াই আরও তীব্রতর হয়েছে।

এছাড়া চলমান এই যুদ্ধ সুদানের সুদূর পশ্চিমের দারফুর অঞ্চলেও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই অঞ্চলটি অতীতের নানা সংঘাতের কারণে ইতোমধ্যেই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতিতে ভুগছিল এবং সেখানে বেশ কয়েকটি শহর ও শহরের বাসিন্দারা আরব যাযাবর উপজাতিদের সাথে সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়াদের আক্রমণের খবর দিয়েছে।

টিএম