পাকিস্তানে গতদিন নতুন করে আরও চার সহস্রাধিক মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ের পর দেশটিতে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড। পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে পাকিস্তানে এখন করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।

করোনার সরকারি ডাটাবেজ অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তানে আরও ৪ হাজার ৩৬৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন; যা আগের দিন ছিল ৩ হাজার ৯৪৬ জন। গত ২ জুলাইয়ের পর দেশটিতে একদিনে এত সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। তখন পাকিস্তানে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ চলছিল আর ওইদিন আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৪৩২ জন। 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী গতদিন যে চার সহস্রাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে ২ হাজার ৪৫১ জন পাঞ্জাব প্রদেশের; যা মোট সংক্রমণের ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ। খাইবার পাখতুনখাওয়াতেও সংক্রমণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গতকাল প্রদেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৮৯০ জন। আগের দিন এই সংখ্যাটা ছিল ৫৮৩ জন।   

এছাড়া দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের হারও এখন বেড়েছে। সংখ্যাটা প্রতি একশো জনে ১০ দশমিক ২ জন। উল্লিখিত দুই প্রদেশে ছাড়াও সিন্ধ প্রদেশে ২৪৭, বেলুচিস্তানে ৩২, ইসলামাবাদে ৬৬৩, আজাদ জম্মু-কাশ্মীরে ৭৯ এবং গিলগিত বালতিস্তানে গতকাল ৬ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।    

একই সময়ে আরও ৬৩ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষ মারা গেছেন। এরমধ্যে ৪৩ জনই পাঞ্জাবের বাসিন্দা। দেশটির ন্যাশনাল কমান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার (এনসিওসি) জানিয়েছে, হাসপাতালগুলো ফের রোগীতে পূর্ণ হয়ে উঠছে। বেশ কিছু শহরে অক্সিজেন বেডের সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য সংকটে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাঞ্জাবের। 

লকডাউন-বিধিনিষেধ

প্রদেশজুড়ে তৃতীয় দফায় মহামারি করোনাভাইরাসের এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মুখে পাঞ্জাবের রাজ্য সরকার প্রাদেশিক রাজধানী শহর রাওয়ালপিন্ডি ছাড়াও গুজরানওয়ালা ও শিয়ালকোটের ১১টি এলাকায় ‘স্মার্ট লকডাউন’ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।  

অপরদিকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক সরকার রাজ্যের সব মার্কেট শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছে। আরও কিছু বিধিনিষেধ জারি করার পরিকল্পনাও রয়েছে রাজ্য সরকারের। 

এছাড়া চলতি সপ্তাহের শুরুতে এনসিওসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যেসব শহরে করোনায় আক্রান্তের হার আট শতাংশের বেশি সেসব শহরে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। তখন দেশজুড়ে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল ওই ফোরাম। 

আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ জারি থাকবে। এর আগে সবশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ৭ এপ্রিল বৈঠক করবে ফোরামটি। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশনা জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

এছাড়াও এনসিওসি আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রাজধানী ইসলামাবাদের যেসব এলাকায় করোনার প্রকোপ বেশি সেসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। 

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ওই ফোরাম পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া, আজাদ কাশ্মীরের দশটি শহর এবং রাজধানী ইসলামাবাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৫ থেকে ২৮ মার্চ দুই সপ্তাহের বসন্তের ছুটি দিয়েছিল।  

এএস