মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের পরদিন মিয়ানমারজুড়ে যখন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলছে, পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ, তখন রাজধানী নেইপিদোতে জমকালো ডিনার পার্টি আয়োজনের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করেছে দেশটির জান্তা সরকার।

রোববার রাতে দেশটির সামরিক বাহিনী আয়োজিত ওই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন দেশটির সেনা ও বর্তমান জান্তা সরকারপ্রধান মিন অং হ্লেইং ও সরকারের অন্যান্য প্রতিনিধিরা।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতে দেখা গেছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান পার্টিতে আসা অতিথিদের সঙ্গে করমর্দন করছেন, হাসি মুখে কথা বলছেন এবং শেষে ডিনারের জন্য টেবিলে বসেছেন। 

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই ডিনার পার্টির বিভিন্ন ছবি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং মিয়ানমারের আন্দোলনকারীরা এর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বার্মিজ আন্দোলনকারী মাউং জারনি নামে এক বিক্ষোভকারী তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ডিনার পার্টির ছবি পোস্ট করে বলেন, ‘প্রিয় বিশ্ব, আমরা, মিয়ানমারের অধিবাসীরা তাদের আর সামরিক বাহিনী বলি না। আমরা তাদের নাম দিয়েছি ‘নেইপিদো সন্ত্রাসী’। দেখুন, কীভাবে সন্ত্রাসীরা স্যুট-বুট পরে উৎসব করছে।’

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে তারা।  

মিয়ানমারের কারাবন্দিদের সহায়তাকারী বেসরকারি দাতা সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) ও স্থানীয় বিভিন্ন মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে চারশ ছাড়িয়ে গেছে।

শনিবার মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস ছিল দেশটির সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এদিন দেশজুড়ে নিহত হন ১৬৪ জন। একদিনে নিহতের হিসেবে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ/জেএস