মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ কাতারে বিয়ে, ভ্রমণ ও সন্তান জন্মদান সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়গুলোতে দেশটির নারীরা যেন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাতার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ(এইচআরডব্লিউ)। রোববার কাতারের নারীদের মানবাধিকার বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেখানেই এই দাবি জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনটি প্রস্তুতে কাতারের ৫০ জন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এইচআরডব্লিউ। তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির অবিবাহিত নারীদের অন্তত ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিদেশে ভ্রমণের জন্য পিতা বা পরিবারের পুরুষ বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের অনুমতি নিতে হয়। পরিবারের পুরষ সদস্য, বিশেষ করে পিতা ও স্বামী যে কোনো সময় যে কোনো নারীর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন।

দেশের নারীদের উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে কাতার সরকার; কিন্তু সেই সূত্র ধরে কোনো নারীরা যখন বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইছেন, তখনই দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। এইচআরডব্লিউ বলেছে, সাক্ষাৎকার দেওয়া অধিকাংশ নারী জানিয়েছেন—তারা বিদেশে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু পরিবারের অনুমতি না থাকার কারণে তারা সেখানে যেতে পারেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নারীদের জীবন ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ অভিভাবকদের খবরদারি ও জোরজবরদস্তির কারণে সম্প্রতি কাতারে পারিবারিক অশান্তি বাড়ছে। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা কোনো রকমে দেশ থেকে পালাতে পারছেন, কিন্তু বাকিদের ওপর নেমে আসছে নির্যাতন।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদকে যদিও ‘অসম্পূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছে কাতারের সরকারি জনসংযোগ দফতর (জিসিও); তবে দফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিবেদনে যে ঘটনাগুলোর বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।

এক বিবৃতিতে জিসিওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নারীরা যেন নিজের অধিকার ভোগ করতে পারে এবং নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারে, সেজন্য সরকার ধারবাহিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে।’

রোববার কাতারের অলিম্পিক কমিটিও জানিয়েছে, দেশটির ক্রীড়াঙ্গণে যেন নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণে সমতা নিশ্চিত হয়, সেজন্য কাজ করবে কমিটি কর্তৃপক্ষ।

গত বছর কাতারে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার; কিন্তু আরবের অন্যান্য দেশগুলোর মতো কাতারে এখনো নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অনুমতি বাধ্যতামূলক। দেশটিতে এমনকি শিশুদের প্রাথমিক অভিভাবক হিসেবেও স্বীকৃতি নেই নারীদের। বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরে সন্তানদের অভিভাকত্বের ক্ষেত্রেও নারীদের এখনও গুরুত্ব দেওয়া হয়না দেশটিতে।

দেশটির নারীরা যে মুখ খুলতে চাননা— ব্যাপারটি এমন নয়; কিন্তু যখনই নারীরা এ বিষয়ে কথা বলেন, কাতারের প্রচলিত আইন, সরকারী ভয়ভীতি ও অনলাইনে হয়রানিসহ বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হন তারা।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, ২০১৯ সালে কাতারের এক নারী বেনামী একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে দেশটির পিতৃতান্ত্রিক অভিভাকত্বের সমালোচনা করে টুইট করেছিলেন। তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গ্রেফতার করে ওই নারীকে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ