মিসরের সুয়েজ খালে আটকে পড়া কনটেইনারবাহী জাহাজটি মুক্ত হলেও সেখানে শত শত নৌযানের যে জট তৈরি হয়েছে তা সারতে আরও সাড়ে তিনদিন সময় লাগতে পারে। সোমবার আটকে পড়া এভার গিভেন জাহাজটিকে সুয়েজ খালের কূল থেকে নামানোর পর মিসরের কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে।

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ওসামা রাবি মিসরের একটি টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘জাহাজটি পুনরায় ভাসানোর পরই খালটি দিনের ২৪ ঘণ্টার জন্য চলাচলের উপযোগী হবে। এটি করতে কমপক্ষে সাড়ে তিনদিন সময় লাগবে।’

সোমবার এক ভিডিওতে দেখা যায়, জাহাজের পেছনের অংশ খালের তীরের দিকে ঘুরে গেছে, ফলে খালের অনেকটা জায়গা অবমুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসেবা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইঞ্চিকেপও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আটকে পড়া জাহাজটি নড়েছে। 

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এভার গিভেন জাহাজটিকে আড়াআড়ি অবস্থা থেকে ৮০ শতাংশ সোজা করা হয়েছে। সোমবার আরও পরের দিকে সেটিকে সরানোর পরবর্তী কাজ শুরু হবে।

কিন্তু উদ্ধারকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রধান আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, এভার গিভেন উদ্ধারকাজ শেষ করাটা এক টুকরো কেকের মতো সহজ হবে না।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক এই পথ বন্ধ রয়েছে এভার গিভেনের হঠাৎ ঘুরে যাওয়ার কারণে। মিসরের এই খালে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য ও কনটেইনারবাহী হাজার হাজার জাহাজ ও অন্যান্য নৌযান বিকল্প পথে চলছে। 

জাহাজটি আংশিক ঘুরে যাওয়ায় সেখানে পুনরায় যান চলাচল শুরুর আশা দেখা দিয়েছে। সুয়েজ খালের অচলাবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে দিনে গড়ে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য পরিবহন স্থগিত হয়ে যায়।

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের কর্মী এবং ডাচ কোম্পানি স্মিট স্যালভেজ জাহাজটিকে কূল থেকে নামানোর জন্য টাগ বোট ব্যবহার করেন। জাহাজটি আটকে পড়ার পর খালের একপাশে মাত্র ৪ মিটার জায়গা মুক্ত থাকলেও বর্তমানে সেখানে ১০২ মিটার জায়গা মুক্ত হয়েছে।

গত ২২ মার্চ লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার পথে সুয়েজ খালে আটকা পড়েছিল পানামার পতাকাধারী জাহাজ ‘এভার গিভেন’। প্রবল বাতাস ও ধূলিঝড়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরে গিয়েছিল জাহাজটি। এসময় সুয়েজ খালের দক্ষিণাংশের সংকীর্ণ একক লেনে আড়াআড়িভাবে আটকে যায় এটি। ফলে প্রায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় ভূমধ্যসাগর কেন্দ্রিক বিশ্ব বাণিজ্যের পরিবহন ব্যবস্থায়।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওসামা রাবিই জানিয়েছিলেন, ‌‘অচলাবস্থা কাটাতে কাজ চলছে। কিন্তু এখনও নিশ্চিত নয় যে, কখন জাহাজটি আবারও পানিতে ভাসতে পারবে। তিনি বলেন, ‘জাহাজের পেছনের অংশ সুয়েজের দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। (স্থানীয় সময়) রাত ১১টা পর্যন্ত এটাই ইতিবাচক দিক; কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে আমরা কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।’

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, স্রোতের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় রোববার সকাল থেকে জাহাজে থাকা কন্টেইনারগুলো সরাতে শুরু করেন তারা। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কন্টেইনার তারা সরিয়েছেন।

তিনি বলেন, আটকে পড়া জাহাজটি মুক্ত করতে এর আগে ১৪টি উদ্ধারকারী নৌকা (টাগবোট) ব্যবহার করা হয়েছিল; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তারপর এ কাজের জন্য একটি বিশেষ ক্রেন ব্যবহার করেছে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ, যেটি ২০০ ফুট উপর থেকে কন্টেইনার ওঠাতে ও নামাতে সক্ষম।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকায় এর প্রবেশমুখ পোর্ট সুয়েজ এবং ভূমধ্যসাগরের পোর্ট সাইদে আটকা পড়েছে সাড়ে তিনশরও বেশি জাহাজ। ফলে ওই সমুদ্রপথে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের জাহাজজট। গত ছয় দিন ধরে বহু মালবাহী জাহাজকে তাদের মূল রুট থেকে সরিয়ে বিকল্প পথে আফ্রিকা ঘুরে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করতে হয়েছে।

মিসরের সুয়েজ অঞ্চলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করে প্রায় ১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি খনন করা হয়। ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় খালটির খননকাজ।

১০ বছর পর ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর নৌ-চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সুয়েজ খাল। এই খালের আয় দিয়ে মিসরের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থের যোগান দেয়া হয়।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

এসএস/জেএস