সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়ন ও গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে অভ্যুত্থানের পর দুই মাসের মাথায় নিহতের সংখ্যা এই মাইলস্টোন অতিক্রম করল।

অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) জানিয়েছে, সোমবারও মিয়ানমারজুড়ে ১৪জন নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর মধ্যে ইয়াঙ্গুনের দক্ষিণ ড্রাগন জেলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে আটজন।

এএপিপি’র মতে, তারা ৫১০ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও অনেক বেশি হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার ওই এলাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভকারীরা এসময় বালির বস্তা দিয়ে তৈরি ব্যারিকেডের পেছনে মাথা নিচু করে অবস্থান করছিলেন। তবে ঠিক কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও মনে করা হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অবশ্য দাবি করেছে, রাস্তায় জড়ো হওয়া সন্ত্রাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে ‘দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী অস্ত্র’ ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের দাবি, এতে আহত হয়েছে একজন।

দক্ষিণ ড্রাগন জেলার এক বাসিন্দা মঙ্গলবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সোমবার দিবাগত রাতে ওই এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘সারা রাত ধরে গুলিবর্ষণ করেছে সেনা সদস্যরা।’ এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মিয়ানমারের পুলিশ বা জান্তা সরকারের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে নারী ও শিশুসহ গত শনিবার দেশটির সামরিক বাহিনী ১১৪ জন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে। এদের মধ্যে অনেককে বিক্ষোভরত অবস্থায় আবার অনেককে তাদের বাড়িতে হত্যা করা হয়। গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেওয়া এসব বিক্ষোভকারীকে ‘ফলেন স্টার-স’ বা ‘খসে যাওয়া তারা’ বলে উল্লেখ করেছে অভ্যুত্থানবিরোধীরা। দিনটি ছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস। 

পরদিন রোববার পৃথক দুই স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আরও দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানায় রয়টার্স। মিয়ানমার নাউ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী নেইপিদোতে একদল বিক্ষোভকারীকে লক্ষ্য করে সেনারা গুলি করলে একজন নিহত হন।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তারপর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ায় অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেন মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

এএপিজির হিসেব মতে এ পর্যন্ত দেশটিতে সামরিক বাহিনীর গুলিতে মরা গেছেন প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ। নিহতদের নিহতদের ৯০ শতাংশকেই গুলি করে এবং তাদের এক-চতুর্থাংশকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম