যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান (ফাইল ছবি)

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালাতে ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষণ শিগগিরিই শুরু হবে। সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ রোমানিয়ায় আগামী আগস্টে এই প্রশিক্ষণ শুরু হবে। লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে কর্মকর্তারা একথা বলেছেন।

বুধবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মঙ্গলবার ডাচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাজসা ওলংগ্রেন এবং ডেনমার্কের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েলস লুন্ড পউলসেনকে পাশে রেখে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ রোমানিয়ায় এই যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

ট্রোয়েলস লুন্ড পউলসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করি, আমরা আগামী বছরের শুরুতে (এই প্রশিক্ষণের) ফলাফল দেখতে সক্ষম হবো।’

অন্যদিকে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেন, প্রশিক্ষণটি ছয় মাসের বেশি স্থায়ী হবে না বলে তিনি আশা করেন এবং এরপরই ইউক্রেন তার দেশে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করবে।

মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহারে ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ১১ দেশের সমন্বয়ে একটি জোট রয়েছে এবং এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস এবং ডেনমার্ক। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় মার্কিন যুদ্ধবিমান ব্যবহার করতে পারলে যুদ্ধের মোড় তারা নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে পারবে।

অবশ্য উন্নত ফাইটার জেট ব্যবহারে ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি আগে বিতর্কিত হিসাবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে জাপানে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেন এই বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল আদায় করে নিতে সক্ষম হয়।

তবে এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া সতর্ক করে বলেছিল, কিয়েভকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেওয়া হলে তা ‘ব্যাপক ঝুঁকি’ সৃষ্টি  করবে। একইসঙ্গে এই ধরনের পদক্ষেপ ইউরোপের অন্যান্য অংশেও যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছিল মস্কো।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে এই সংঘাত চলছে। তবে রাশিয়ার কবল থেকে নিজেদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অঞ্চল দখলমুক্ত করার জন্য ইউক্রেন গত মাসে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

অবশ্য রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকেই ইউক্রেন তার মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পেয়ে আসছে এবং এখনও অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে যুদ্ধবিমানসহ অত্যাধুনিক আরও অস্ত্র দাবি করে আসছে ইউক্রেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনের মিত্ররা প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য সহায়তা কিয়েভকে অব্যাহতভাবে প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। তারপরও ফাইটার পাইলট প্রশিক্ষণ শুরুর অর্থ এই নয় যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে ইউক্রেনকে এফ-১৬ আসলেই সরবরাহ করা হবে।

সামরিক সহায়তা দিচ্ছে এমন কোনো মিত্র দেশই এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধবিমান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

আর এরই মধ্যে রোমানিয়া গত সপ্তাহে ঘোষণা করে, তারা ন্যাটো অংশীদার রাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের সামরিক পাইলটদের জন্য এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে চায়। রোমানিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং ২০০৪ সাল থেকে দেশটি ন্যাটো জোটের সদস্য।

এছাড়া এই দেশটি ২০০৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও সদস্য হিসেবে রয়েছে এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রতিরক্ষা ব্যয়ও বাড়িয়েছে।

এমনকি মস্কোর বাহিনী ইউক্রেন আক্রমণ করার পরে ন্যাটো জোটের সদস্য রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং স্লোভাকিয়াতে অতিরিক্ত বহুজাতিক যুদ্ধদল পাঠিয়ে ইউরোপের পূর্ব প্রান্তে ন্যাটো তার উপস্থিতিও বাড়িয়েছে।

টিএম