চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী’ অপরাধ চালাচ্ছে চীন। মঙ্গলবার বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে ২০২০ সালে গোটা বছরজুড়ে উইঘুর ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ পরিচালনা করেছে চীনের ক্ষমতাসীন সরকার। গতবছর তাদের ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো হলো— যথেচ্ছভাবে তাদের আটক ও বন্দিশিবিরে পাঠানো, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, শ্রমদানে বাধ্য করা এবং ধর্মপালন, মতপ্রকাশ ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা।

প্রতিবছরই বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর পর্যবেক্ষণভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই ধারবাহিকতায় ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন নিজে উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।

২০২০ সালে গোটা বিশ্বে মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে’ উল্লেখ করে ব্লিনকেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। বৈশ্বিক মানবাধিকার রক্ষা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতিকে যারা বিপন্ন করে তোলে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কূটনৈতিকভাবে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।’

উইঘুর সম্প্রদায় মূলত তুর্কি বংশোদ্ভুত একটি জাতিগোষ্ঠী। চীনের বৃহত্তম প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে তারিম উপত্যকা এলাকার বাসিন্দা উইঘুররা দেশটির সরকারিভাবে স্বীকৃত ৫৬ টি নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম।

উইঘুর মুসলিম

 

জিনজিয়াং এর বাইরে উইঘুরদের সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় দক্ষিণ মধ্য হুনান প্রদেশে রয়েছে। চীনের বাইরে মধ্য এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্র যেমন কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বাস করেন।

চীনের জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত উইঘুরদের অধিকাংশকেই বিভিন্ন বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে। চলতি বছর সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাদের কাছে সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চীন সরকারের গণহত্যার অপরাধ সংঘটনের খুবই বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। উইঘুরদের কাজ করতে বাধ্য করা ছাড়াও বন্দিশিবিরে উইঘুর নারীদের পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি।

চীনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, দেশটির সরকার পদ্ধতিগতভাবে উইঘুর মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করে দিচ্ছে এবং শিশুদের তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। জাতিসংঘ বলছে, জিনজিয়াংয়ের যে বন্দিশিবিরে অনুসন্ধান চালিয়েছিল বিবিসি, সেখানে ১০ লাখ উইঘুর আছেন।

বিবিসিতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর চীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই অবশ্য বলেছিলেন, উইঘুরদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ অযৌক্তিক, হাস্যকর এবং ডাহা মিথ্যা। তিনি আরো বলেছিলেন, উইঘুরদের কোনো বন্দিশিবিরে রাখা হয়নি, বরং উগ্রবাদ দূর করতে সেখানে এসব মানুষকে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনে চীনের উইঘুর ইস্যু ছাড়া আরো যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি ও তার সমর্থকদের আটক, ইয়েমেনে সরকার ও হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘাত ও দেশটির দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি-মানবিক বিপর্যয়, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও বিক্ষোভকারীদের ওপর সেখানকার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

সূত্র: আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ