ক্রিমিয়ার গোলাবারুদ ডিপোতে ড্রোন হামলা, কের্চ সেতু সাময়িক বন্ধ
ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের একটি গোলাবারুদ ডিপোতে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম সড়ক ও রেল সেতুতে যান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। রোববার (২৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিমিয়ার একটি গোলাবারুদ ডিপোতে ড্রোন হামলার জেরে চারপাশের ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসবাসরত বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে উপদ্বীপকে রাশিয়ার সাথে সংযুক্তকারী সেতুতে সংক্ষিপ্তভাবে সড়ক যান চলাচল স্থগিতও করা হয় বলে এই অঞ্চলের মস্কো-নিযুক্ত গভর্নর শনিবার জানিয়েছেন।
ইউক্রেন বলেছে, তাদের সেনাবাহিনী মধ্য ক্রিমিয়ার ‘অস্থায়ীভাবে দখলকৃত’ ওকটিয়াব্রস্কে এলাকায় একটি তেল ডিপো এবং রাশিয়ান সেনাবাহিনীর গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রয়টার্স বলছে, হামলার ফলে একটি গোলাবারুদ ডিপো বিস্ফোরিত হয়েছে বলে রাশিয়ান-নিযুক্ত গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ বলেছেন। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের শেয়ার করা ফুটেজে ক্রিমিয়ার ওই স্থানে ধূসর ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী দেখা গেছে।
আকসিওনভ পরে জানান, হামলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সমস্ত রেল চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হলেও পরে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির একধিক বার্তাসংস্থা বলেছে, ওই হামলার পর ১২ জনের চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হয়েছে এবং চারজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া।
এদিকে ওই হামলার পর ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম সড়ক ও রেল সেতুতে যান চলাচলও সংক্ষিপ্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। উপদ্বীপটির যে স্থানে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে ক্রিমিয়ান এই সেতুটি প্রায় ১৮০ কিলোমিটার (১১০ মাইল) পূর্বে অবস্থিত।
পাঁচদিন আগে ওই সেতুতে বিস্ফোরণে দু’জন নিহত এবং ব্রিজের রাস্তার একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেতুতে সেটিই ছিল দ্বিতীয় বড় হামলা।
১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক সরবরাহ রুটে পরিণত হয়েছে। কারণ ইউক্রেনের দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের কাছে অস্ত্র ও সামরিক রসদ পাঠানোর অন্যতম পথ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দীর্ঘ এই সেতুটি।
এছাড়া দীর্ঘ এই সড়ক ও রেল সেতুটি গত বছরের অক্টোবরেও একটি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্রেমলিন সেসময় বলেছিল, ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বাহিনী ওই হামলা চালিয়েছিল। অবশ্য কয়েক মাস পর ইউক্রেন পরোক্ষভাবে ওই হামলার কথা স্বীকার করে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শুক্রবার বলেন, রুশ-নির্মিত এই সেতুটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর কাছে বৈধ লক্ষ্যবস্তু। কারণ এটি রাশিয়ার সামরিক সরবরাহের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, ব্রিজে নানা দুর্ঘটনার জন্য রাশিয়া উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং একটি অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখলে নিয়েছিল রাশিয়া। অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মস্কোর এই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, রুশ বাহিনী কৃষ্ণসাগরের এই উপদ্বীপটি দখল করার পর সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানেই দেখা গেছে, ক্রিমিয়ানরা সত্যিকার অর্থেই রাশিয়ার অংশ হতে চায়। যদিও সেই গণভোটকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্বীকৃতি দেয়নি।
টিএম