ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩০ জন। গত ১১ অক্টোবরের পর দেশটিতে এটি একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এছাড়া বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনায় ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে।

গত কয়েক মাসে সর্বোচ্চ শনাক্তের দিনে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ৪৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচি সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে ৪০ কোটি মানুষকে টিকাদানের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় বিশ্বে তৃতীয় ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ২৯৭ জনে। এছাড়া দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ২২ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ।

গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ভারতের টিকাদান কর্মসূচি এতদিন দেশটির সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং অন্য যারা গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছিলেন; তাদের মধ্যে সীমিত ছিল। বিশ্বের অনেক দেশে পূর্ণ বয়স্ক সব নাগরিকদের টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও ব্যতিক্রম ছিল ভারত।

এদিকে, দেশটিতে ভ্যাকসিন নেওয়ার সারিতে মানুষের উপস্থিতি আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে রাজধানী নয়াদিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালের সামনে উদ্বিগ্ন টিকাপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এই সারিতে উপস্থিত সবাই বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য এসেছেন বলে জানিয়েছেন।

দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এক টুইটে বলেন, টিকাদান কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করা হলেও দেশে ভ্যাকসিনের কোনো ঘাটতি হবে না। রাজ্যগুলোতে টিকার সরবরাহ ধারাবাহিকভাবে পূরণ করছে কেন্দ্র। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

চলতি সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির করোনাবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ভিকে পল বলেন, ‌‘দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ থেকে ভয়াবহ খারাপ হচ্ছে।’

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও দেশটির হাজার হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী মাসব্যাপী কুম্ভ মেলার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় শহর হরিদ্বারে ব্যাপক সমাগম করেছেন। গঙ্গা স্নান করার পর তীর্থযাত্রী সুনন্দা বলেন, ‘মা গঙ্গা আমাদের রক্ষা করবে এবং বিশ্বে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক সব প্রভাব ধ্বংস করে দেবে। তবে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, যে ১২টি রাজ্যে করোনার উল্লম্ফন শুরু হয়েছে; সেসব রাজ্য থেকে যারা গঙ্গাস্নান করতে আসবেন, তাদের অবশ্যই করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে। 

দেশের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ভারত ইতোমধ্যে বিদেশে ভ্যাকসিনের রফতানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি বিশ্বের উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গঠিত উদ্যোগ কোভ্যাক্সকেও ভ্যাকসিন সরবরাহ স্থগিত রেখেছে ভারত। 

ভারতে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে দেশটির ভ্যাকসিন রফতানির পরিমাণ এরচেয়েও বেশি। মাথাপিছু হিসাবে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে ভারতে টিকাদানের হার কম হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটির সরকার।

মহামারি মোকাবিলায় বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি একটি ভ্যাকসিন এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি অন্য একটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে ভারত। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রকরা শিগগিরই রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স, এনডিটিভি।

এসএস/জেএস