মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মরাউক-ইউ শহরের মায়াটাসাং আইডিপি ক্যাম্প। সাম্প্রতিক ছবি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে বন্যা ও ভূমিধসে ৫ জন নিহত হয়েছেন। মৌসুমী বৃষ্টির পর দেশটিতে এই বন্যা ও ভূমিধস দেখা দেয় এবং এর জেরেই প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া আরও ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে শনিবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌসুমী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মিয়ানমারে পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং আরও ৪০ হাজার মানুষকে কর্তৃপক্ষ অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে বলে কর্মকর্তারা শুক্রবার জানিয়েছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির রাখাইন প্রদেশের ভিডিও ফুটেজে সেখানকার গ্রাম ও কৃষিজমির বিশাল এলাকাকে ঘোলা তথা হলুদ-বাদামী পানিতে নিমজ্জিত থাকতে দেখা গেছে। মিয়ানমারের এই প্রদেশটি গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোচার আঘাতেও কার্যত বিধ্বস্ত হয়েছিল।

এএফপি বলছে, মিয়ানমার প্রতি বছর এই সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের শিকার হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সারা বিশ্বই চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘটনাগুলো আরও খারাপভাবে দেখা দিয়েছে।

ভারী বৃষ্টির পর ইয়াঙ্গুনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাগোতে কিছু বাসিন্দাকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও দ্রুত ক্রমবর্ধমান পানির মধ্যে আটকা পড়েন বহু মানুষ।

বাগোর বাসিন্দা ২৩ বছর বয়সী সোয়ে মিন অং এএফপিকে বলেছেন, ‘বাগোতে প্রতি বছর বন্যা হয় তবে এবারের বন্যা সবচেয়ে খারাপ। সাধারণত, বর্ষাকালে পানি হাঁটু বা উরু পর্যন্ত থাকে। তবে এবার অবস্থা বেগতিক হওয়ায় তার পরিবার নৌকা কিনতে সংগ্রাম করছে।’

তিনি বলেন, ‘কিছু পরিবার একটি মঠে চলে গেলেও অন্যরা এখানে থেকে গিয়েছিল। কারণ তারা ভাবেনি যে, পানি খুব বেশি হতে পারে। এমনকি কিছু এলাকায় পানির স্তর আমার উচ্চতার দুই গুণ বেশি।’

এএফপি বলছে, শুক্রবার রাতে ৮৭০ জনেরও বেশি লোক বাগোর একটি মঠে ঢুকে পড়ে এবং তারা সন্ন্যাসীসহ খাবার সহায়তা দেয় এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খাবার গ্রহণ করে। স্থানীয় কর্মকর্তা খিন মং বলছেন, ‘আমরা তাদের থাকার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করেছি।’

৬৬ বছর বয়সী মিন থাও বলেন, তার দোতলা বাড়ির নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে এবং তার পরিবার এখন উপরের তলায় থাকছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি বাগোতে সাত-আট বছরের মধ্যে এটিই প্রথম প্রবল বন্যার ঘটনা।

এদিকে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের পরিচালক লে শোয়ে জিন ও বলেছেন, বন্যা ও ভূমিধসে পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং শুক্রবার সারা দেশে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগ অস্থায়ী শিবিরে সরিয়ে নেওয়া পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিচ্ছে।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয়ের অনুমান, ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় চলতি আগস্ট মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগো, বিলিন এবং সালউইন নদীর পানির স্তর এখন হ্রাস পাচ্ছে জানিয়ে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মোন এবং কায়িন (প্রদেশে) মৌসুমি ধানের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

এর আগে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারে বন্যা শুরু হয় এবং ওই বন্যায় রাখাইন, কাচিন, কারেন, সোম এবং চিনসহ দেশের নয়টি প্রদেশ ও অঞ্চলকে ক্ষতির মুখে ফেলে। এছাড়া কারেন প্রদেশে ভূমিধসের কারণে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহরের সঙ্গে যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে।

দেশটির শাসক জান্তা বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করতে এক মাস সময় লাগতে পারে।

টিএম