মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী চলমান বিক্ষোভে শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। গত প্রায় দেড়মাসে এই নিয়ে দেশটিতে নিহতের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশ ছাড়ালো। একইদিনে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ ও সমর্থনের অভিযোগে ২ সাংবাদিক সহ ১৮ সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার।

মিয়ানমারের স্থানীয় পত্রিকা মিয়ানমার নাও নিউজ এবং বাগো উইকলি জার্নাল অনলাইন নিউজের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, শনিবার দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর মনিওয়া, বাগো এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর থাটনের বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে মনিওয়াতে তিন জন, বাগোতে দু’জন ও থাটনে একজন নিহত হন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক এনএলডি (ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি) সরকারকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি সহ তার দলের কয়েক হাজার কর্মী-সদস্য-সমর্থকদের।

সামরিক বাহিনীর এই অভ্যুত্থানের পরই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন তারা।

সাধারণ মানুষের এই বিক্ষোভ দমনে প্রথম পর্যায়ে দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে মিয়ানমারের নিরপত্তা বাহিনীর সদস্যদের টিয়ার শেল, রাবার বুলেটের পাশাপাশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় ক্ষমতাসীন জান্তা।

শুরু থেকেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের হিসাব রাখছিল মিয়ানমারের কারাবন্দিদের সহায়তাদানকারী সংস্থা অ্যাসিস্টান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি)। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারে চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনে শনিবারের আগ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ৫৫০। শনিবার এই সংখ্যা বেড়ে হলো ৫৫৫। সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরো বলো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৪৬ জনই শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক।

এদিকে একইদিন দুই সাংবাদিক সহ ১৮ জন সেলিব্রেটি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাববিস্তারকারী ব্যাক্তির (সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ক্ষমতাসীন জান্তা। চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সমর্থনের অভিযোগে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারী সূত্র।

এই তালিকায় থাকা অন্যতম সেলিব্রেটি হলেন মিয়ানমারের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পাইং ফাইওয়ে, যিনি ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে আসছেন।

পরোয়ানা জারির পর এক ফেইসবুক পোস্টে ফাইওয়ে বলেন, ‘আমি মোটেও ভীত নই। পরোয়ানা জারি হোক কিংবা যে কোনো কিছু হোক, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, খুনী সামরিক স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান থাকবে। জনতার সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক।’

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ