রাশিয়ার করোনা টিকা স্পুটনিক ৫ এর ডোজ কিনতে পাকিস্তানের প্রধান শহর করাচির বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন তরুণ ও যুবসমাজ। টিকা নেওয়ার জন্য লম্বা সারিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন তারা। রোববার করাচির বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

পাকিস্তানে সম্প্রতি সরকারি উদ্যেগে স্বাস্থ্যকর্মী ও পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। তার পরের তালিকায় রয়েছেন ৫০ বছরের কম বয়সী লোকজন। এর বাইরে যারা ব্যক্তিগত খরচে করোনা টিকা নিতে চান, তাদের জন্য রাশিয়ার করোনা টিকা স্পুটনিক ৫ এবং চীনের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ক্যানসিনো বায়োলজিকসের করোনা টিকা কনভিডেসিয়া আমদানির অনুমতি দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গত মার্চে দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য স্পুটনিক ৫ এবং কনভিডেসিয়া আমদানির অনুমতি দেয় পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে স্পুটনিক ৫ এর দুই ডোজ টিকার বিক্রয়মূল্য ৮ হাজার ৪৪৯ পাকিস্তানি রুপি নির্ধারণ করা হলেও পরে আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে তা বাড়িয়ে ১২ হাজার রুপি করা হয়।

কিন্তু মার্চের শেষ নাগাদ হঠাৎ বেঁকে বসে পাকিস্তান সরকার। দাম আরো বাড়ানো না হলে টিকার ডোজের আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে আমদানিকারকদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

এ ঘটনায় দেশটির আদালতের দ্বারস্থ হন আমদানিকারকরা। এখনো আদালত থেকে কোনোপ্রকার নির্দেশনা না আসায় সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষর করা পূর্বের চুক্তি অনুযায়ীই টিকার ডোজ বিক্রি হচ্ছে দেশটিতে।

পাকিস্তানে সরকারি গণটিকাদান কর্মসূচি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেই তালিকা কবে নাগাদ শেষ হতে পারে তা বলতে পারছে না কেউই। এ কারণে পঞ্চাশের কম বয়সীদের টিকা গ্রহণে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ফলে, দেশটির তরুণ ও যুব প্রজন্মের একটি বড় অংশই ঝুঁকেছেন টিকা কেনার দিকে। রোববার থেকে করাচির কয়েকটি হাসপাতালে টিকা বিক্রি শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতে দেখা গেছে, শনিবার মধ্যরাত থেকেই ওই হাসপতালের সামনে টিকা গ্রহীতাদের দীর্ঘলাইন শুরু হয়েছে।

রোববার ও সোমবার যারা টিকা নিয়েছেন, তারা আগে থেকেই সেগুলো বুক করে রেখেছিলেন উল্লেখ করে করাচি সাউথ সিটি হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেন, তারা যে ৫ হাজার ডোজ স্পুটনিক ৫ টিকা এনেছিলেন, দু’দিন আগেই সবগুলো বুকড হয়ে গিয়েছিল।

ওই হাসপাতালে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া সাদ আহমেদ (৩৪) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘টিকা গ্রহণ করে আমি খুবই আনন্দিত। নিজেকে সুরক্ষিত ও সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ওয়েবসাইট করোনা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৮ এবং এ রোগে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন ১৪ হাজার ৭৭৮ জন।

পাকিস্তানের পরিকল্পনা-উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসাদ ওমর সম্প্রতি এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৮।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ