ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম নভোযান মৎস ৬০০০

শুধু মহাকাশে নভোযান পাঠানো নয়, এবার সমুদ্রও জয় করতে যাচ্ছে ভারত। অতল সাগরের গভীরে নামবে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম ডুবোজাহাজ 'মৎস্য-৬০০০'।

বুধবার এই সমুদ্রযানের প্রস্তুতি দেখতে তার অন্দরে পা রাখলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। ভারতের চেন্নাইতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশেন টেকনোলজিতে গিয়ে নিজে এই ডুবোযানের কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন রিজিজু। ‘মৎস্য ৬০০০’র ভেতরেও ঢোকেন তিনি। কীভাবে এই সমুদ্রযান কাজ করবে, তা বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে। সমুদ্রযানের একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।

সমুদ্রের ৬০০০ মিটার গভীরে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যেই তৈরি করা হচ্ছে ‘মৎস্য ৬০০০’। খানিকটা সাবমেরিনের মতো হলেও কাজকর্মে এই ডুবোযানটি অনেকটাই ভিন্ন এটি একটি সাবমার্সিবল সাবমেরিন। গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান ও গবেষণার নিরিখেই তৈরি করা হচ্ছে এটি। যুক্তরাষ্ট্র, চীন সহ ৬টি দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে ‘মৎস ৬০০০’র অভিযান। সমুদ্রের গভীরে নেমে গবেষণা করবেন বিজ্ঞানীরা। প্রথম অভিযানে ডুবোযানটিকে ৫০০ মিটার নিচে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের।

২০২৬ সালে ‘সমুদ্রায়ন মিশন’ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি। যেই ডুবোযানে চেপে প্রথমবার দেশটির মানুষ নামবে অতল মহাসাগরের গভীরে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেই সাবমেরিনের ট্রায়াল রানের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।

মহাসাগরের ৬ হাজার মিটার নীচে পাড়ি দেবে ভারতের সাবমেরিন। প্রথম পর্যায়ে তিনজন বিজ্ঞানী যাবেন। ২০২৪ সাল থেকে শুরু হবে ট্রায়াল রান। সাগরের জলরাশির বিপুল চাপ যাতে সইতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে সাবমেরিনে। অত্যন্ত উন্নতি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

কেমন এই সাবমেরিন

সমুদ্রায়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার কোটি রুপি। ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ওশন টেকনোলজির গবেষক-ইঞ্জিনিয়াররা এই ডুবোযানটি তৈরি করছেন। তিনজন যেতে পারবেন এই সাবমেরিনে।

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে টিকে থাকতে পারবে। পরে এই সময়সীমা ৯৬ ঘণ্টা অবধি বাড়বে।

এক হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার মিটার গভীরতায় গিয়েও এই ডুবোযান কাজ করতে পারবে।

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য যে কোনও রকম ডিভাইস, সেন্সর নিয়ে এই জলযান গভীর সমুদ্রে চলে যেতে পারবে।

সাগরের বিপুল জলরাশির চাপ সহ্য করতে পারার মতো শক্তপোক্ত করে তৈরি করা হয়েছে ‘মৎস ৬০০০’ ডুবোযানের বহিরাবরণ বা খোলস। ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থাও রাখা হবে।

আগামী ৫ বছরের সমুদ্র গবেষণার জন্য ইতিমধ্যেই ৪,০৭৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে ভারতের সরকার।

কেন এই অভিযান

সমুদ্রের অতলে নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট সহ একাধিক খনিজ পদার্থের খোঁজ চালাতেই এই সমুদ্র অভিযান বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া সমুদ্রের অতলে অনেক অজানা প্রজাতির প্রাণীর খোঁজও চলবে এই অভিযানে। সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাবেন বিজ্ঞানীরা। মৎস্য-৬০০০ সাবমেরিনটিকে নরওয়ের সার্টিফিকেশন এজেন্সি ইতিমধ্যেই ছাড়পত্র দিয়েছে। ১০ হাজার মিটার সমুদ্র তলদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিয়েছে নরওয়ের এই সংস্থা।

সূত্র : দ্য ওয়াল

এসএমডব্লিউ