যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু সাফল্য ধরা দিলেও সার্বিকভাবে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করে তিনি বলেন, সরকার এখনও করোনার বিরুদ্ধে ‘জীবন-মরণ’ সংগ্রাম জারি রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচির প্রাথমিক লক্ষ্য পুরণে সফল হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। গত ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠনিক দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজের শাসন মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ১০ কোটি নাগরিককে করোনা টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মেয়াদের প্রথম ৭৫ দিনের মধ্যেই দেশের ১৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মেয়াদের বাকি দিনগুলোর মধ্যে আরো ৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাইডেন প্রশাসন।

মঙ্গলাবর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির একটি টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েছিলেন জো বাইডেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি লক্ষ্যে সফল হয়েছি, কিন্তু এই সংকটের শেষ সীমায় এখনো পৌঁছাতে পারিনি। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। করোনার বিরুদ্ধে এখনও আমাদের জীবন-মরণ সংগ্রাম চলছে।’

‘তাই আপনাদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। অর্থাৎ, নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা এবং সিডিসির (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল) যে ধরনের মাস্ক পরার সুপারিশ করেছে, তা নিয়মিত পরার ক্ষেত্রে যেন গাফিলতি না করি।’  

‘ব্যাপারটি এভাবে চিন্তা করুন— আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে সুদিন; আর যেমনটা আমি আগে বলেছিলাম, ৪ জুলাই দেশের স্বাধীনতা দিবস আপনারা সবাই নিজেদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে উদযাপন করবেন….প্রশ্ন হচ্ছে সেই সময় পৌঁছানো পর্যন্ত আর কতো মৃত্যু-সংক্রমণ-ক্ষয়ক্ষতি দেখতে হবে আমাদের।’

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ওয়েবসাইট করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৮ মানুষ এবং এ রোগে এখন পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন ৫ লাখ ৭০ হাজার ২৬০ জন।

নিহতদের স্মরণ করে বাইডেন বলেন, ‘আমরা তাদের বাঁচাতে পারিনি। এখন আমাদের যেটি করতে হবে স্বাধীনতা দিবসের আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ এপ্রিল, মে ও জুন মাসে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।’

নিজ বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী ১৯ তারিখ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো অঙ্গরাজ্যের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। যদি যৌক্তিক কারণে কোনো নাগরিক টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হতে অপারগ হন, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্রাম্যমান দল সেই ব্যক্তির আবাসস্থলে পৌঁছে তাকে টিকা দিয়ে আসবেন।

বক্তব্য দেওয়ার পর টিকাদান কেন্দ্রটি ঘুরে দেখছিলেন জো বাইডেন। এ সময় সাভিয়া খান নামে এক ভারতীয়-মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে আলাপ হয় তার। সাভিয়া ভারত থেকে এসেছে শুনে তিনি ভারতের প্রশংসা করেন; বলেন, বেশ কয়েকবার ভারতে গিয়েছেন তিনি।

সাভিয়া খান বলেন, ‘আমি আমার তিন সন্তানকে বড় করেছি যুক্তরাষ্ট্রে। একজন স্নাতক পাশ করেছে, দ্বিতীয়জন স্নাতক পড়ছে এবং তৃতীয়জন একাদশ শ্রেনীতে পড়ছে। আমি খুবই গর্বিত যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে পেরে।’

উত্তরে বাইডেন বলেন, ‘আপনি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নন, আপনি এদেশের একজন সম্মানিত নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা সবাই অভিবাসী। আমরা একটি অভিবাসী জাতি। আর একটা কথা হলো, আমাদের যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট, তার মাও ভারত থেকে এসেছিলেন।’

সূত্র: প্রেস ট্রাস্ট ইন্ডিয়া

এসএমডব্লিউ