ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের ইম্ফলে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার রাতে ইম্ফল পশ্চিম জেলার দুটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে ইম্ফল পশ্চিম জেলার পাটসোই থানা এলাকার নিউ কিথেলমানবি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। মনিপুর পুলিশ বলছে, অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন। পরে নিরাপত্তা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পিটিআই বলছে, অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনার পর স্থানীয় মেইতি সম্প্রদায়ের নারীরা কিথেলমানবি এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাধায় তাদের বিক্ষোভ পণ্ড হয়ে গেছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইম্ফল পুলিশ।

আরও পড়ুন

গত ৩ মে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটে। চাকরিতে কোটা এবং জমির অধিকার নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি ও সংখ্যালঘু কুকি-জো সম্প্রদায়ের মাঝে সেই সময় সহিংসতা শুরু হয়। এরপর থেকে রাজ্যজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে।

মেইতি সম্প্রদায়ের চাকরি ও কলেজে ভর্তির কোটার দাবির প্রতি আদালতের ইতিবাচক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে কুকি-জো সম্প্রদায়। দীর্ঘদিন ধরে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, মেইতি সম্প্রদায় বর্তমানে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর জন্য সংরক্ষিত এলাকায় জমি কেনার অনুমতি পাবে। কুকি-জো সম্প্রদায় আদালতের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ।

মণিপুরের মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মাঝে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭৫ জনের প্রাণহানি এবং ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ৩২ লাখ বাসিন্দার এই রাজ্যে বিশৃঙ্খলার শুরু হয়েছিল মে মাসের প্রথম দিকে।

রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলন হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।

সম্প্রতি ভারতের হাই কোর্ট মেইতি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাই কোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতি সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, পিটিআই।

এসএস