করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মহাসংকটে পড়েছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র। দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল এই রাজ্যটি করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসের লাগামছাড়া সংক্রমণে দিশেহারা মহারাষ্ট্র সরকার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৯০৭ জন। একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২২ জন। সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ২৬১ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫৬ হাজার ৬৫২।

এর আগে মহারাষ্ট্রে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছিল মাত্র চারদিন আগে, গত ৪ এপ্রিল। সেদিন ৫৭ হাজার ৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান সেই রেকর্ডও ভেঙে দিল। নতুন করে এবার ৫৯ হাজার ৯০৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

রাজ্যটিতে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ দুই হাজার। এতো গেল পুরো মহারাষ্ট্রের চিত্র। ভারতের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র শহর মুম্বাইয়ের অবস্থা আরও খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বাইয়ে ১০ হাজার ৪৪২ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেবল মুম্বাই শহরেই এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১১ হাজার ৮৫৬ জন।

তবে সংক্রমণ রুখতে কঠোর হয়েছে মহারাষ্ট্র রাজ্যের সরকার। রাজ্যটিতে ইতোমধ্যেই সপ্তাহান্তে লকডাউন জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শুক্রবার রাত ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে মুম্বাই শহরেও জারি করা হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কারফিউ কার্যকর থাকবে।

মুম্বাই শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হলেও ছাড় রয়েছে হোম ডেলিভারি, খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে। রেস্তোরাঁগুলোতে কেবল খাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া গণপরিবহন চলছে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে। বন্ধ রয়েছে শপিংমল, সিনেমা হল।

এছাড়া দিনের বেলা ৫ জনের বেশি জমায়েতে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে রাজ্যবাসীকে বারবার সতর্ক করছে সরকার। এর মধ্যে আবার করোনা টিকার সংকটের মুখে পড়েছে মহারাষ্ট্র। রাজ্যটির হাতে আর মাত্র তিন দিন চালানোর মতো করোনার টিকা মজুত রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারকে ইতোমধ্যেই বিষয়টি জানিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপ বলেছেন, মুম্বাইসহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় টিকার মজুত শেষ হওয়ার পথে। বিষয়টি ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে জানানো হয়েছে।

রাজেশ টোপ বলছেন, ‘রাজ্যে আর তিনদিনের মতো ভ্যাকসিন রয়েছে। আমরা কেন্দ্রকে আরও ভ্যাকসিন পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছি। রাজ্যে প্রতিদিন সর্বোচ্চ সংখ্যায় মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মুম্বাইয়েও ভ্যাকসিনের মাত্র তিন দিনের স্টক রয়েছে।’

তার দাবি, আমাদের হাতে আর ১৪ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। এই পরিমাণ টিকা দিয়ে আর তিন দিন চালানো সম্ভব। প্রতি সপ্তাহে আমাদের ৪০ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োজন হয়, যেন প্রতিদিন আমরা ৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারি।

গোটা মহারাষ্ট্রে লকডাউন না ঘোষণা করা হলেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দিনে ৫ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাজ্যটির প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী, কোথাও ৫ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জড়ো হতে পারবেন না। ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চলছে সরকারি অফিস।

এদিকে সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করায় আশঙ্কার মধ্যে আছেন অন্য রাজ্য থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা। সম্পূর্ণ লকডাউনের আশঙ্কায় অনেক শ্রমিকই মহারাষ্ট্র ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

টিএম