দক্ষিণ ইসরায়েলের সেডরোতে হামাসের হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি পুলিশ স্টেশন দেখছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। রোববারের ছবি

৩০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ। ইসরায়েলে আটক থাকা সকল বন্দির মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এসব বন্দির প্রত্যাবাসন করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে গোষ্ঠীটি।

সোমবার (৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক জিহাদের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালা রোববার বলেছেন- তার দল ৩০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে বন্দি করে রেখেছে। গত শনিবার হামাস ইসরায়েলে হামলা শুরু করার পর গাজা উপত্যকায় তাদের অপহরণ করা হয়েছিল।

ইসরায়েলি কারাগারে আটক থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির কথা উল্লেখ করে আল-নাখালা আরও বলেন, ‘আমাদের সমস্ত বন্দির মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এসব বন্দিকে প্রত্যাবাসন করা হবে না।’

এর আগে গত শনিবার রাতে হামাসের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হামলার সময় বহু ইসরায়েলি সৈন্যকে আটক করেছে তারা। আর সেটি ইসরায়েলি কারাগারে থাকা সমস্ত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও স্বীকার করেছে যে, হামাসের হামলায় তাদের সৈন্য ও কমান্ডাররা নিহত হয়েছে এবং অনেককে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজন সেনাকে হামাস বন্দি করে নিয়ে গেছে তার কোনও পরিসংখ্যান দেয়নি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

এছাড়া হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ভূখণ্ডটির ৪৪ সেনাসদস্য রয়েছে। ফিলিস্তিনি এ গোষ্ঠীর হামলায় প্রথমে ২৬ সেনা নিহতের তথ্য জানিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামলায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২২০০ ইসরায়েলি।

অবশ্য ইসরায়েলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও অনেক সেনা নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া হামাসের সদস্যরা বেশ কয়েকজনকে আটক করে গাজায় নিয়ে গেছেন। সেখানে তারা কি অবস্থায় আছে সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিকভাবে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। হামলা শুরুর প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পাঁচ হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করে গাজার এই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। পরে হামাসের শত শত যোদ্ধা স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়।

মূলত মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের এই অভিযান শুরু করে হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়েছে ইসরায়েল।

প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে মিশরে অবস্থানকারী একদল ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর হাত ধরে ইসলামিক জিহাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। গাজা ভূখণ্ড, ইসরায়েলের দখল করা পশ্চিম তীর ও ইসরায়েল নামে পরিচিত ভূখণ্ড নিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য।

এছাড়া গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের প্রধান দুটি যে সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ইসলামিক জিহাদ, অপরটি হামাস। তবে সক্ষমতা ও আকারের দিক দিয়ে হামাসের চেয়ে তুলনামূলক বেশ ছোট ইসলামিক জিহাদ।

টিএম