ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের মধ্যকার চলমান যুদ্ধে গাজায় আটকে পড়া বেসামরিক লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য ‘সেফ প্যাসেজ’ তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি।

সংবাদ সম্মেলনে কিরবি বলেন, ‘গাজার বেসামরিক লোকজন যেন নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন, সেজন্য সেফ প্যাসেজ খুবই প্রয়োজন। হামাস যা করেছে, তার জন্য গাজার বেসামরিক লোকজন কোনোভাবেই দায়ী নন। তারা কোনো ভুল করেননি।’

‘সেফ প্যাসেজ তৈরির জন্য ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ইসরায়েল ও মিসরীয় অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ ও আলোচনা শুরু করেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা কিরবিকে প্রশ্ন করেন, চলমান এই যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলকে ‘বুঝিয়ে নিরস্ত করতে’ যুক্তরাষ্ট্র কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেবে কিনা।

উত্তরে জন কিরবি বলেন, ‘এ ব্যাপারটি আমরা ইসরায়েলের সরকার ও আইডিএফের ওপর ছেড়ে দিতে চাইছি। এই যুদ্ধ নিয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’

দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শেষে ৮ অক্টোবর শনিবার ভোর রাত থেকে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগেই ৩ হাজারেরও বেশি রকেট ছোড়া হয়েছিল ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে।

কাছাকাছি সময়ে মোটরচালিত প্যারা গ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমাণ্ডের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি ওই কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল ও জীপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন হামাসের আরও কয়েক শ’ যোদ্ধা।

গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ও পূর্বপ্রস্তুতি না থাকার কারণে হামাসের হামলার পর প্রথম দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল ইসরায়েল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে ফিরে আসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ হচ্ছে আল আকসা অঞ্চলে। ইসরায়েলের সরকার ইতোমধ্যে হামাসকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গত চার দিনে গাজা ভূখণ্ডের অন্তত ২০০ টি ‘লক্ষ্যবস্তু’ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। রকেট ও বিস্ফোরক ছোড়ার জন্য এসব লক্ষ্যবস্তু ব্যবহার করত হামাস।

শনিবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত যুদ্ধে উভয়পক্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৩০০ জন এবং আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮ হাজারেরও বেশি। নিহত ও আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজন রয়েছেন।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জন কিরবি জানিয়েছেন, গত চার দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল ও গাজা ভূখণ্ডে ২২ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১৭ জন।

সূত্র : আল জাজিরা

এসএমডব্লিউ